বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক বিভিন্ন থানার পৃথক মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১৩ জনকে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে পৃথক থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত তাদের এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।
আসামিদের মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার সাতটি হত্যা মামলা ও মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে নতুন করে গ্রেপ্তার হয়েছে আদাবর থানার একটি হত্যা মামলায়।
এ ছাড়া সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে যাত্রাবাড়ী থানার দুটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে যাত্রাবাড়ী থানার চারটি হত্যা মামলা ও মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার ৫টি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে। যাত্রাবাড়ী থানার দুটি হত্যা মামলা ও সূত্রাপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে।
অন্যদিকে, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে যাত্রাবাড়ী থানার ছয়টি হত্যা মামলা, মোহাম্মদপুর থানার দুইটি হত্যা, সূত্রাপুর থানার দুইটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম। অন্যদিকে কোতোয়ালি থানার একটি হত্যা ও উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে কাফরুল থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর জামাল মোস্তফাকেও ভাসানটেক থানার একটি হত্যা মামলা ও কাফরুল থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা চৌধুরী জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় সাব্বির আহমেদ স্বপন ও মো. জুলহাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের ওপর আজ বিকেলে শুনানি হবে। অন্যদিকে যাত্রবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে আজ গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি ছিল। তবে আসামি হাজির না থাকায় আগামী ২৭ জানুয়ারি তার বিষয়ে শুনানি হবে বলে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. শরিফ কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিন সকালে কনকনে শীতে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। এরপর কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় সারি সারি করে হাঁটিয়ে এজলাসে তোলা হয়। এ সময় আসামিদের হাতে হাতকড়া, মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আসামিদের অনেককে বিমর্ষ মুখে দেখা যায়।
একই আদালতে শুনানি হওয়ায় ১৩ জনকে একই কাঠগড়ায় তোলা হয়। এতে করে আসামিরা গাদাগাদি করে থাকায় নড়াচড়া করার মতো ভালো অবস্থা ছিল না। আসামিদের শুনানি শেষে সিঁড়ি দিয়ে নামানোর সময় প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে পড়েন সবাই। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শুনানি শেষে আসামিদের প্রিজনভ্যানে করে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।