পদবি হিসেবে কেউ একজন লিখে দিয়েছিলেন ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক’। ওটা পড়ে জাকারিয়া পিন্টুর সে কি হাসি! ওই হাসিটা ছিল সাবেক এ ফুটবল তারকার ট্রেডমার্ক, যা দিয়ে অনেক সমস্যা ঝেড়ে ফেলতেন। মৃত্যুকে কি আর ঝেড়ে ফেলা যায়! অমোঘ সত্যটা মেনে নিয়েছেন জাকারিয়া পিন্টু।
৮৪ বছর বয়সী জাকারিয়া পিন্টু বার্ধক্যজনিত কারণে গত কয়েক বছর চলাফেরা সীমিত করে ফেলেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাসা থেকে খুব একটা বের হতে দেখা যায়নি তাকে। হৃদরোগের কারণে রোববার তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরের আগে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক।
জাকারিয়া পিন্টুর জন্ম ১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি নওগাঁ জেলায়। শৈশব কেটেছে বরিশালে। ব্রজমোহন কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পূর্ব পাকিস্তান সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় একাদশ হয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলেছেন কিংবদন্তি ডিফেন্ডার। ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল দিক স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দেওয়া। ১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিল তার নেত্বাধীন দল। যুদ্ধের জন্য তহবিল সংগ্রহে আয়োজিত ম্যাচের আগে পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণও করেছিলেন জাকারিয়া পিন্টু এবং দলের অন্য সদস্যরা।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। ১৯৭৩ সালে তিনি জাতীয় দল থেকে এবং ১৯৭৫ সালে মোহামেডানের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেন সাবেক এ সেন্টারব্যাক। ফুটবলার হিসেবে অবসরের পর জাকারিয়া পিন্টু জড়িয়েছেন সাংগঠনিক কাজে। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বাছাই, ক্রীড়া সংবিধান সংশোধনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ছিলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালকও।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ক্রীড়াবিদ কামরুন নাহার ডানা প্রয়াত জাকারিয়া পিন্টুর পরিবারের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে ধানমন্ডি ১১ নম্বরে তার প্রথম জানাজা পড়া হবে। ইংল্যান্ড থেকে মেয়ের আসার কথা ছিল সোমবার সন্ধ্যায়। রাতে মরদেহ হিমাগারে রাখার কথা। আগামীকাল সকালে প্রিয় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার কথা জাকারিয়া পিন্টুর মরদেহ। দ্বিতীয় জানাজা এবং গার্ড অব অনার শেষে মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে আজই।
সাবেক সতীর্থ, দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহচর জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সহঅধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা প্রতাপ শঙ্কর হাজরা কালবেলাকে বলছিলেন, ‘পিন্টু ভাইকে নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে, অনেক কথা হয়েছে। নতুন করে আর কিছু বলার নেই। মাঠে ফুটবলার হিসেবে ছিলেন অসাধারণ, মাঠের বাইরে নিপাট ভদ্রলোক। তার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
প্রতাপ শঙ্কর হাজরা আরও বলেন, ‘আগে তো আমরা খেলতাম রক্ষণে তিনজন নিয়ে। পিন্টু ভাই থাকতেন মাঝে। রক্ষণে পিন্টু ভাই থাকার অর্থ হচ্ছে, ওই জায়গা নিয়ে আমরা নির্ভার থাকতাম। কারণ পিন্টু ভাইকে ভেদ করে গোল করা কঠিন নয়, অসম্ভব ছিল।’