কুমিল্লায় অস্ত্রোপচারে জোড়া লাগলো বিচ্ছিন্ন হাত, পাচ্ছেন অনুভূতি

2 days ago 10

পেশায় একজন করাতকল শ্রমিক কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার বাসিন্দা নজির আহমেদ (৪০)। ট্রাক থেকে নামানোর সময় তার ডান হাতের ওপর একটি গাছের গুঁড়ি পড়ে। এতে সঙ্গে সঙ্গে কবজি থেকে হাতটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে কুমিল্লার একটি হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন হওয়া সেই হাতটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুনরায় জোড়া লাগানো সম্ভব হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার হাসপাতালে টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা অস্ত্রোপচারে হাতটি জোড়া লাগানো হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে চিকিৎসক আরিফুর রহমান, রহমত উল্লাহ ও এনামুল হক এই অস্ত্রোপচার করেন।

আহত নজির আহমেদ জেলার বরুড়া উপজেলার আদমসার গ্রামের বাসিন্দা।

নজির আহমেদ বলেন, ‌‘মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার আদমসার এলাকায় ট্রাকের ওপর থেকে গাছের গুঁড়ি নামাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি গুঁড়ি আমার ডান হাতে পড়ে। আমার সহকর্মীরা গুঁড়িটি সরাতে সরাতে হাতটা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন আমি চিল্লাইয়া বলছি, আমার হাত নাই। সঙ্গে সঙ্গে সহকর্মীরা বিচ্ছিন্ন হাতটি পলিথিনে মুড়িয়ে আমাকে ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তাররা কুমিল্লা ট্রমা হাসপাতালে রেফার করেন। আলহামদুলিল্লহা! অপারেশন সফল হয়েছে। ডাক্তাররা আশ্বাস দিয়েছেন, আমি আগের মতো এই হাত দিয়ে সব ধরনের কাজ-কাম করতে পারবো। তবে সময় লাগবে।’

ব্যক্তিগত জীবনে নজির আহমেদ তিন সন্তানের বাবা। দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে কাজ করে তিনি পরিবার চালাতেন।

কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত হাসপাতালে আনা হলে অঙ্গ জোড়া লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রোগীর স্বজনরা সচেতন হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে এনেছেন। যে কারণে অস্ত্রোপচারে সফল হয়েছি।’

তিনি বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একটু পরপরই পর্যবেক্ষণ করছেন। জোড়া লাগানো হাতে স্পর্শ করলে তিনি অনুভূতি পাচ্ছেন। আরও কয়েক দিন তাকে হাতপাতালে থাকতে হবে। কুমিল্লায় এই ধরনের অস্ত্রোপচার দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন মাইলফলক বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল হক বলেন, ‘শ্রুমিক নজির আহমেদকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তার স্বজনরা অস্ত্রোপচারের খরচ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তখন আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগে অস্ত্রোপচার হোক, খরচের কথা পরে হবে। অবশেষে অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কুমিল্লাতেই এমন জটিল অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে। এতে আগামীতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। চিকিৎসা ব্যয়ও কমবে।’

জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/জেআইএম

Read Entire Article