ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ঘাস কাটতে গিয়ে বিজিবি সদস্যদের কাছে মারপিটের শিকার হয়েছেন কয়েকজন। উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের কাঁদশুকা গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক-কৃষাণীরা এমন অভিযোগ করেছেন। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিষয়টি বানোয়াট।
সরেজমিনে জানা যায়, গত ৪ জুন দুপুরে হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের বুজরুক সীমান্ত এলাকার নাগর নদীর পশ্চিম দিকে ঘাস কাটতে যান কাঁদশুকা গ্রামের ৭ জন কৃষক-কৃষাণী। ঘাস কেটে বাড়ি ফেরার সময় বুজরুক সীমান্ত ফাঁড়ির বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সদস্যরা তাদের ডাক দেন। কৃষকরা তাদের কথায় সাড়া দিয়ে এগিয়ে যান। কথা বলার এক পর্যায়ে ওই কৃষকদের (নারী-পুরুষ) হাতে থাকা ঘাস কাটার অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের মারপিট শুরু করেন বিজিবির সদস্যরা। পরে পালিয়ে আসেন সকলেই। এরপর রাতেই অনেকে ভর্তি হন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরদিন সকালেই হাসপাতাল থেকে চলে যান তারা।
বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। ঘাস কাটতে যাওয়া ওই কৃষকদের অভিযোগ, কোনো কারণ ছাড়াই বিজিবি সদস্যরা তাদের মারপিট করেন। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হরিপুর উপজেলার বুজরুক সীমান্ত ফাঁড়িতে যাওয়া হলে সেখানে কর্মরত বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সাংবাদিক দেখেই কথা না বলে ফাঁড়ির গেট লাগিয়ে দেন।
যদিও ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়কের দাবি, ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে বিজিবির কেউ অন্যায় করলে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
তবে তার দাবি, ওই গ্রামের তিনজন ব্যক্তি ভারত থেকে আসছিলেন। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা বিজিবি সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা দিয়ে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেন।
অপরদিকে ভুক্তভোগী রমজান আলীর বাবা এনামুল হক বলেন, ‘আমার জমিতে আমি যদি যেতে না পারি কে যাবে? আমরা কৃষক মানুষ, জমিতে আবাদ করতে গিয়ে যদি মারপিট খাইতে হয় তাহলে কী বলার থাকে। আমার ছেলে নদীর অপর প্রান্ত থেকে ঘাস কাটে নিয়ে আসার সময় কোনো কারণ ছাড়া বিজিবির লোকেরা মারপিট করলো। এটার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
আরেক ভুক্তভোগী বেলাল হোসেনের স্ত্রী শুকতারা পারভিন বলেন, নদীর ওপারে গিয়েছিলাম আমার স্বামী আমিসহ কয়েকজন। বাড়ি ফেরার সময় নদীর পাড়ে বিজিবির লোকেরা আমাদের ডাক দেয়। আমরা কাছে যাওয়ার পর তারা আমাদের ঘাস কাটার যন্ত্র কৈচা কেড়ে নিয়ে মারপিট শুরু করে। পরে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নুল হকসহ বেশ কয়েকজন বলেন, নদীর ওপারে আমাদের সব কৃষি আবাদ। বিজিবির যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে সেটি বলা দরকার ছিল। কোনো কিছু না বলে এভাবে মারপিট করে ঠিক করেনি। আমাদের গ্রামের ছেলেরা যদি দোষও করে থাকে তাহলে তাদের আইনের হাতে তুলে দেবে। কোনো কিছু বলা নেই, মারপিট করলো। এটা ঠিক নয়। এটার একটা সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার।
ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তানজীর আহম্মদ বলেন, বিষয়টি পুরাই ভিত্তিহীন। মূলত সেদিন ৩ জন ব্যক্তি ইন্ডিয়া থেকে আসছিলেন। পরে বিজিবির টহল পার্টি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করলে তারা আমাদের সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এখানে তাদের মারপিটের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। মূলত কিছু মানুষ বিজিবির সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য এই অভিযোগ তুলছেন। সীমান্ত নজরদারি কঠোর রয়েছে। বিজিবি সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।
তানভীর হাসান তানু/এফএ/এএসএম