বাংলাদেশ তার উদ্যমী শিল্প কর্মীবাহিনী এবং দ্রুত বর্ধনশীল সরবরাহ অবকাঠামোর জন্য বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত ও প্রশংসিত। সম্প্রতি দেশটিকে এক ভয়াবহ পদ্ধতিগত দুর্বলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেবল জীবন ও বস্তুগত ক্ষতিই হয়নি, বরং এটি জনসাধারণের আস্থা এবং দেশের শিল্প স্থিতিশীলতা উভয়কেই মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এবং মিরপুর ও চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) পোশাক কারখানায় সংঘটিত সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলি কিছু সুস্পষ্ট ঘাটতি প্রকাশ করেছে। এই ঘাটতিগুলি হল: অগ্নি নিরাপত্তা প্রস্তুতি, নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং জরুরি প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য এসব ক্ষেত্রেই মানবিক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা প্রকটভাবে উন্মোচিত হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৮ অক্টোবর বিকেলে ঢাকা বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড এই ধরনের দুর্যোগের মাত্রা এবং অর্থনৈতিক তাৎপর্যের এক সুস্পষ্ট উদাহরণ। আনুমানিক দুপুর ২:৩০ মিনিটে আগুনের লেলিহান শিখা আমদানিকৃত পণ্যের জন্য নির্ধারিত কার্গো স্টোরেজ এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে গ্রাস করে। এই ভয়াবহতার কারণে কর্তৃপক্ষ সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সমস্ত বিমান চলাচল স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় (লজিস্টিক) বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটে এবং কলকাতা ও চট্টগ্রাম সহ বিকল্প বিমানবন্দরে অসংখ্য আন্তর্জাতিক বিমানের পথ পরিবর্তন করতে হয়।
জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর অতিরিক্ত সহায়তায় ১৩টি ফায়ার স্টেশনের প্রায় ৩৭টি অগ্নিনির্বাপক ইউনিট মোতায়েন করা হয়। রাত ৯:১৮ নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও, অগ্নিনির্বাপক ও নিরাপত্তা কর্মীসহ মোট ৩৫ জন আহত হন, যার মধ্যে ২৫ জন আনসার বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
এই দুর্ঘটনায় যে বিপুল পরিমাণে বস্তুগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রচুর পরিমাণে আমদানিকৃত পণ্য ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে সময়মতো পণ্য পরিবহনের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও রপ্তানি পণ্য পরিবহন বিভাগটি আপাতদৃষ্টিতে অক্ষত ছিল, এই ঘটনা দেশের প্রধান সরবরাহ কাঠামোর অন্তর্নিহিত ভঙ্গুরতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
কর্তৃপক্ষ অগ্নিকাণ্ডের উৎস নির্ণয় এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের ঘোষণা দেয়। তবুও, বৃহত্তর প্রশ্নটি রয়ে গেছে: কীভাবে একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ তার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো কেন্দ্রগুলিতে এত গুরুতর অপারেশনাল দুর্বলতার সম্মুখীন হতে পারে, যা এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং জাতীয় ভাবমূর্তিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানায়?
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, শুধু তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতেই বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে ক্রমবর্ধমানভাবে উল্লেখযোগ্য প্রাণহানি, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং বিদেশী বিনিয়োগের আস্থা হ্রাস পেয়েছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এই উদ্বেগগুলিকে আরও তীব্র করে তোলে। এটি দুর্যোগ, প্রতিক্রিয়া এবং অপর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তিমূলক চক্রকে চিত্রিত করে। প্রতিটি ঘটনা অগ্নি নিরাপত্তা মান, পর্যবেক্ষণ এবং জবাবদিহিতা ব্যবস্থায় ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরদার করে।
বিমানবন্দরের এই ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে, পোশাক শিল্পখাতে দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ইতিমধ্যেই অগ্নি নিরাপত্তার ঘাটতির তীব্র মানবিক মূল্য তুলে ধরেছিল। ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবর, মিরপুরের একটি পোশাক কারখানা এবং সংলগ্ন একটি রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১৬ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটে। ব্লিচিং পাউডার এবং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির কারণে আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, আগুনে পোড়ার পরিমাণ বিবেচনা করে ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ বিশ্লেষণের মতো জটিল পদ্ধতির প্রয়োজন হয়েছিল।
এই ট্র্যাজেডি মানব-অধ্যুষিত শিল্প স্থানগুলির সাথে রাসায়নিক সংরক্ষণের বিপজ্জনক সান্নিধ্যকে স্পষ্টভাবে চিত্রিত করে। এটি বাংলাদেশের শিল্প সুরক্ষার ইতিহাসে এক পুনরাবৃত্তিমূলক এবং মারাত্মক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।
মাত্র দুই দিন পর, ১৬ অক্টোবর, চট্টগ্রামের সিইপিজেডের মধ্যে অবস্থিত একটি সাততলা পোশাক কারখানায় আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৫টি অগ্নিনির্বাপক ইউনিট এবং ১৭ ঘন্টারও বেশি নিরলস প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। এই দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়ার সময়কাল জরুরি সাড়াদান ক্ষমতা এবং প্রতিরোধমূলক অবকাঠামো উভয়েরই গুরুতর ঘাটতি প্রকাশ করে। বিশেষ করে উচ্চ ঘনত্বের শিল্প এলাকায় এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ধারাবাহিকতা, নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং সম্মতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলিকেই বারবার তুলে ধরে এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এই সম্মিলিত ঘটনাগুলিকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে, বাংলাদেশের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার গভীর কাঠামোগত দুর্বলতা প্রকাশ পায়। বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বেশ কয়েকটি পুনরাবৃত্তিমূলক কারণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন: শিল্প ও সরবরাহ সুবিধাগুলিতে অপর্যাপ্ত অগ্নি সুরক্ষা অবকাঠামো; বিদ্যমান অগ্নি নিরাপত্তা বিধিমালার দুর্বল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগ; অপর্যাপ্ত জরুরি প্রস্তুতি; মানুষের কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি বিপজ্জনক রাসায়নিকের অনিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণ।
নিম্নমানের বৈদ্যুতিক স্থাপনা এবং পুরানো বা অনুপযুক্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সরঞ্জাম এই ঝুঁকিগুলিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেখানে একটি মাত্র স্ফুলিঙ্গ ব্যাপক ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এই দুর্বলতাগুলি মূলত দ্রুত শিল্পায়ন এবং নিয়ন্ত্রক সক্ষমতার মধ্যেকার অসুস্থ ভারসাম্যহীনতার ফল।
এই দুর্যোগের বিস্তৃত পরিণতি তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের হতাহতের চেয়েও অনেক বেশি সুদূরপ্রসারী।বাংলাদেশের রপ্তানি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস হলো পোশাক শিল্পখাত। এই শিল্পখাতে, এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড কেবল জীবনই নয়, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ফেলে।
শ্রমিকের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এবং ক্রেতাদের আস্থা নষ্ট হয় এবং শ্রমিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। যা এই খাতের বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করে তোলে।
ঢাকা বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি জাতীয় সরবরাহ এবং বাণিজ্য অবকাঠামোর দুর্বলতাগুলিকেও তীব্রভাবে তুলে ধরে। এর ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল, আমদানি-রপ্তানি প্রবাহ এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, শুধু তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতেই বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে ক্রমবর্ধমানভাবে উল্লেখযোগ্য প্রাণহানি, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং বিদেশী বিনিয়োগের আস্থা হ্রাস পেয়েছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এই উদ্বেগগুলিকে আরও তীব্র করে তোলে। এটি দুর্যোগ, প্রতিক্রিয়া এবং অপর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তিমূলক চক্রকে চিত্রিত করে। প্রতিটি ঘটনা অগ্নি নিরাপত্তা মান, পর্যবেক্ষণ এবং জবাবদিহিতা ব্যবস্থায় ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরদার করে।
নীতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনাগুলি বিশ্লেষণ করলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক দেখা যায়।
প্রথমত, নিয়ন্ত্রক কাঠামোর আদর্শ এবং মাঠ পর্যায়ের বাস্তবায়নের মধ্যে প্রায়শই গুরুতর ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। অগ্নি নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিধিমালাগুলি কাগজে-কলমে বিদ্যমান থাকলেও, সেগুলির প্রয়োগে ধারাবাহিকতার অভাব দেখা যায়। অবহেলা ও বিধি লঙ্ঘনের জন্য নির্ধারিত শাস্তি খুব কম ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত কঠোরতার সঙ্গে কার্যকর করা হয়।
দ্বিতীয়ত, শিল্প সম্প্রসারণ প্রায়শই সহায়ক সুরক্ষা অবকাঠামাকে ছাড়িয়ে যায়, যার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়।
তৃতীয়ত, রাসায়নিক সংরক্ষণ এবং বিপজ্জনক পদার্থের পদ্ধতিগত তদারকি অপর্যাপ্ত। এটি বিস্ফোরণ বা তীব্র আগুন লাগার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
এই বিপর্যয়ের অর্থনৈতিক প্রভাবও সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। অগ্নিকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট বাধাগুলি কেবল উৎপাদন বন্ধ করে দেয় না, বরং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ বাধ্যবাধকতাগুলিকেও হুমকির মুখে ফেলে। এর ফলে আর্থিক জরিমানা এবং সুনামের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। একইভাবে, ঢাকা বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্রগুলিতে পণ্য প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি বিদেশী বিনিয়োগের আস্থাকে প্রভাবিত করে এবং একাধিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই অগ্নিকাণ্ডের মানবিক দিকটি কোনোভাবেই অতিরঞ্জিত করা যায় না। তাৎক্ষণিক প্রাণহানির বাইরেও, বিশেষ করে কারখানার মজুরির উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলি তীব্র মানসিক আঘাত এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়। এর সামাজিক প্রভাব, যা সম্প্রদায়ের উপর গভীর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা ব্যবস্থার উপর আস্থা ক্ষুণ্ণ করে, তা গভীরভাবে অনুভূত হয়।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলি প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় এবং জরুরি ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। কার্যকর দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য কেবল সুসজ্জিত অগ্নিনির্বাপক ইউনিটই নয়, বরং সংস্থাগুলির মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ, সম্পদ রক্ষায় দ্রুত মোতায়েন এবং উচ্চ-প্রভাবশালী অবকাঠামোর জন্য সুচিন্তিত জরুরি পরিকল্পনা প্রয়োজন।
ভবিষ্যতের দিকে তাকালে, ব্যাপক অগ্নি নিরাপত্তা সংস্কারকে কেবল একটি নিয়ন্ত্রক বাধ্যবাধকতা হিসেবে নয়, বরং জাতীয় উন্নয়নের জন্য একটি কৌশলগত অপরিহার্যতা হিসেবে দেখা উচিত।
জীবন এবং অর্থনৈতিক সম্পদ রক্ষার জন্য অগ্নি-প্রতিরোধী অবকাঠামো, আধুনিক শনাক্তকরণ ও দমন ব্যবস্থা এবং কর্মী প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ অপরিহার্য। স্বচ্ছ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, স্বাধীন নিরাপত্তা নিরীক্ষা এবং জবাবদিহিতা কাঠামো স্থিতিস্থাপকতাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে যেন দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি এই ধরনের দুঃখজনক পরিণতিতে পর্যবসিত না হয়।
শিল্প সুরক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সেরা অনুশীলনসমূহ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট-নির্দিষ্ট অভিযোজনের সাথে মিলিত হয়ে, এই সামগ্রিক প্রচেষ্টায় মূল্যবান দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে।
ঢাকা বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এবং মিরপুর ও চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাংলাদেশের শিল্প ও সরবরাহ ব্যবস্থার পদ্ধতিগত ভঙ্গুরতার স্পষ্ট স্মারক হিসেবে কাজ করে। এই বিপর্যয়গুলি কাঠামোগত দুর্বলতার বিরুদ্ধে সম্মিলিত ও টেকসই পদক্ষেপের গুরুত্বকে তুলে ধরে।
জীবন রক্ষা, অর্থনৈতিক সম্পদ সুরক্ষিত করা এবং বাংলাদেশের শিল্প ও পরিবহন ব্যবস্থায় আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি নেতৃত্ব, শিল্প জবাবদিহিতা এবং সামাজিক সম্পৃক্ততা সমন্বিত করা আবশ্যক।
সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলি তাই একটি সতর্কতামূলক বার্তা এবং একই সঙ্গে একটি সুযোগ উভয়ই উপস্থাপন করে। কাঠামোগত দুর্বলতা মোকাবিলা করে এবং ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশ এই ট্র্যাজেডি থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলিকে স্থায়ী স্থিতিস্থাপকতায় রূপান্তর করতে পারে। এটি নিশ্চিত করবে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেন মানুষের জীবন অথবা পদ্ধতিগত অস্থিরতার বিনিময়ে অর্জিত না হয়। কেবল ইচ্ছাকৃত, সমন্বিত এবং টেকসই পদক্ষেপের মাধ্যমেই জাতি ভবিষ্যতের অগ্নিকাণ্ড রোধ করতে এবং একটি নিরাপদ, আরও স্থিতিস্থাপক শিল্প ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারে।
লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।
এইচআর/জেআইএম