‘রিপোর্ট দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সহকারীকে বললাম—দেখো তো, আমি এখনো বেঁচে আছি কি না!’—এভাবেই ফেসবুকে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন রংপুর স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রতীন্দ্র নাথ মন্ডল। কারণ, তার থাইরয়েড পরীক্ষার রিপোর্টে এমন ফল এসেছে, যা একজন চিকিৎসকের পেশাগত জীবনে ‘দেখা সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য, দুটোই হতে পারে।’
সম্প্রতি শরীর খারাপ লাগায় রুটিন পরীক্ষার সঙ্গে থাইরয়েড ও ডায়াবেটিস টেস্ট করান ডা. রতীন্দ্র। রিপোর্ট হাতে পেয়ে তিনি দেখেন, থাইরয়েডের মান এতটাই অস্বাভাবিক যে সেটি বাস্তবে সম্ভব নয়। ‘আমি আবার অন্য একটি ল্যাবে টেস্ট দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রথম ল্যাব ফোন করে বলল, স্যার রিপোর্টটা কি ঠিক আছে? পরে জানাল, টাইপ মিস্টেক হয়েছিল,’ জানালেন তিনি।
নতুন রিপোর্টে দেখা গেলো—সব ঠিক আছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে গেলো—যারা রিপোর্টে সই করেছেন, তারা কি একবারও চোখ বুলিয়ে দেখেননি?
কিছুদিন পর আবারও তিনি থাইরয়েড পরীক্ষা করান। এবার রিপোর্ট এলো এমন এক সীমান্ত মানে—না ভালো, না খারাপ। ‘রোগী হিসেবে এটা সবচেয়ে ভয়াবহ সময়। বোঝা যায় না, রোগ ফিরে এসেছে কি না,’ বলেন ডা. রতীন্দ্র। ঢাকায় গিয়ে পুনরায় পরীক্ষা করলে নিশ্চিত হন—রোগটি ফিরে এসেছে। অর্থাৎ আগের রিপোর্ট ভুল ছিল।
রংপুরের ল্যাবটিকে বিষয়টি জানালে তারা জানায়, ‘গত মাসে প্রায় এক হাজার টেস্ট হয়েছে। মেশিনের ক্যালিব্রেশন করা যায়নি, তাই এমন হয়েছে।’ তাদের কথায় অনুশোচনা বা দুঃখ—কোনোটিই ছিল না।
ডা. রতীন্দ্র জানান, ‘কেউ ভাববেন না যে আমি ফ্রি টেস্ট করি বলে এমন রিপোর্ট পাই। আমি টাকা দিয়ে, সাধারণ রোগীর মতোই পরীক্ষা করি। যেসব ল্যাবে করেছি, সেগুলো রংপুরের নামকরা প্রতিষ্ঠান। তাদের অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে অন্যদের কথা ভাবলেই ভয় লাগে।’
কেন ডাক্তাররা নির্দিষ্ট ল্যাবের পরামর্শ দেন
এ অভিজ্ঞতার পর তিনি বলেন, ‘রিপোর্টে গড়মিল দেখলে আমি রোগীদের টেস্ট রিপিট করাই, প্রশ্ন করি। তাই রোগীদের আমি নিজের মতো নির্ভরযোগ্য ল্যাবের নাম বলি। অনেকে ভাবে ডাক্তার কমিশন নেন, কিন্তু সত্য হলো—ভুল রিপোর্ট মানে ভুল চিকিৎসা, যা জীবনের ঝুঁকি।’
ডা. রতীন্দ্র নাথ মন্ডলের মতে, ‘আমাদের দেশের বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা দিয়ে গুণগত, মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেওয়া এখন প্রায় অসম্ভব। ল্যাবগুলোর মাননিয়ন্ত্রণ নেই, অনেক জায়গায় মেশিন ক্যালিব্রেশন হয় না, অথচ প্রতিদিন হাজারো রোগী সেখানেই পরীক্ষা করাচ্ছে।’
ডা. রতীন্দ্রর নিজের অভিজ্ঞতা শুধু একজন চিকিৎসকের নয়—এটি সেই সব রোগীর গল্প, যারা রিপোর্ট হাতে পেয়ে আরও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যব্যবস্থা যদি রিপোর্টের ওপরই ভরসা রাখতে না পারে, তাহলে চিকিৎসার ভিত্তিটাই নড়ে যায়।’
এসইউজে/এমআরএম

10 hours ago
7








English (US) ·