কেন পুরস্কার গ্রহণ করতেন না বদরুদ্দীন উমর?
দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, ইতিহাসবিদ ও লেখক বদরুদ্দীন উমর আজ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে জাতি হারাল এক স্পষ্টবাদী চিন্তক ও নিরপেক্ষ ইতিহাসবেত্তাকে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে তিনি আমৃত্যু অকপটে মত প্রকাশ করে গেছেন। গবেষণা ও লেখালেখিতে অসাধারণ অবদানের জন্য তাকে একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও তিনি কখনোই কোনো পুরস্কার গ্রহণ করেননি।
এ বছর (২০২৫) তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা পুরস্কার দিতে চেয়েছে। আমি কখনোই সেগুলো গ্রহণ করিনি। এবারও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে স্বাধীনতা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই, তবে এই পুরস্কার গ্রহণ করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
পুরস্কার না নেওয়ার পেছনে তার সুস্পষ্ট যুক্তি ছিল। ‘প্রতিধ্বনি’ নামের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমি যে লেখালেখি করি, তা করি নিজের ভেতরের তাগিদ থেকে। এর জন্য পুরস্কার পাওয়ার কথা ভাবি না। লেখকের প্রকৃত পুরস্কার হচ্ছে—মানুষ তার লেখা পড়বে, চিন্তা করবে, উপকৃত হবে।
তিনি আরও বলেন, পুরস্কার অনেক সময় লেখকের স্বাধীন চিন্তাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। রাষ্ট্র বা ধনিকশ্রেণি যখন পুরস্কার দেয়, তখন তার পেছনে থাকে লেখককে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখার চেষ্টা। একবার পুরস্কার নিলে পরবর্তীতে আরও পুরস্কারের প্রত্যাশা তৈরি হয়, যা লেখার স্বাধীনতা নষ্ট করে।
নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি উদাহরণ দেন পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর। বলেন, মহাশ্বেতা দেবী শুরুতে পুরস্কার গ্রহণ না করার নীতি গ্রহণ করলেও পরে নোবেল থেকে ম্যাগসেসে—সব ধরনের পুরস্কার নিয়েছেন। এতে তার লেখার মান কমেছে এবং রাজনৈতিক আপসহীনতাও ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
বদরুদ্দীন উমরের মতে, একজন লেখককে সত্যিকার অর্থে মুক্ত থাকতে হলে পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের মধ্যেই রয়েছে তার সততা ও নৈতিক শক্তির প্রকাশ।