কেমন হবে ডিসেম্বরের বইমেলা, জানালেন কবি-লেখকেরা

1 hour ago 3

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজান এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় ‌‘অমর একুশে বইমেলা’ শুরু হবে চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর।চলবে ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলা একাডেমির শহীদ মুনির চৌধুরী সভাকক্ষে অমর একুশে বইমেলার তারিখ নির্ধারণ সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। এমন খবরে নড়েচড়ে বসেছেন কবি-লেখকেরা। যাদের পাণ্ডুলিপি এখনো শেষ হয়নি; তাদের কপালে দেখা গেছে চিন্তার ভাঁজ। কেউ কেউ মেনে নিয়েছেন সার্বিক দিক বিবেচনা করেই। ফলে কেমন হবে বা কেমন দেখতে চান এবারের বইমেলা? এমন প্রশ্নে জবাবে কথা বলেছেন অনেকেই।

জনপ্রিয় লেখক ও উপস্থাপক ইকবাল খন্দকার বলেন, ‘সাধারণত পরিবর্তিত সময়ে বইমেলা ভালো হয় না। সেই হিসেবে আগামী মেলা ততটা ভালো হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবু বাস্তবতা বিবেচনায় সময় পরিবর্তন না করে যেহেতু উপায় ছিল না, অতএব পরিবর্তিত সময়টা মেনে নিতেই হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পরিবর্তিত সময়টা কি যৌক্তিক হয়েছে? না, যৌক্তিক হয়নি। ২০২৫ সালে একটা মেলা হয়েছে। একই বছর আরেকটা মেলা শুরু হতে পারে না। অবশ্যই মেলাটা শুরু হতে হবে ২০২৬ সালে। নইলে দেখা যাবে ২০২৬ সালটা ফাঁকা যাবে। মেলা পাবে না। যেটা করা যেতে পারে, মেলা ফেলা যেতে পারে জানুয়ারিতে। এতে ২০২৬ সাল পেলো। আর যদি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু করে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শেষ করা হয়, তাহলে ফেব্রুয়ারিও পেলো। মানে সোনায় সোহাগা। আর আমি মেলা তেমনই দেখতে চাই, যেমনটা হয় প্রতি বছর। কারণ এটাই আমাদের একুশে বইমেলা। এখানে আহামরি পরিবর্তনের কিছু নেই। শুধু অনিয়মগুলো বন্ধ হলেই হয়।’

কবি ও সম্পাদক দ্বীপ সরকার বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৬ আগামী ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ফলে দেড় মাস আগেই মেলা শুরু হচ্ছে। লেখক পাঠক এটাকে সুবিবেচনায় নেয়নি।’

লেখক ও প্রকাশক মোমিন মেহেদী বলেন, ‘যে কোনো নাগরিক একুশে বইমেলাকে বুকে রাখেন স্মৃতি হিসেবে-প্রেরণার মাস হিসেবে। তা অবশ্যই ফেব্রুয়ারি বলেই তারা বিশ্বাস করেন। এবার তা ‘ডিসেম্বর’র মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসে হওয়ায় আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে। তার ওপর শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী-চাকরিজীবীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য বিমুখতার মাস হিসেবেই সামনে চলে আসবে। তারপরও বলতে চাই, বইমেলা হোক, জমুক প্রাণের মেলা। সেই সাথে অবশ্যই চাই, গতবারের বইমেলার মতো ছন্নছাড়া যেন না হয়। পাশাপাশি ‘মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে’র দায়িত্ব কবি টিমুনি খান রীনোকেই দেওয়া হোক।’

আরও পড়ুন
অমর একুশে বইমেলা শুরু ১৭ ডিসেম্বর 
সিলেটের নীলক্ষেত: রাজা ম্যানশন যেন বইয়ের খনি 

লেখক ও পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল বলেন, ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের সংস্কৃতির হৃৎস্পন্দন। একজন লেখক হিসেবে আমার আশা, এই মেলার মাধ্যমে শুধু পাঠকের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া না হোক বরং লেখক-পাঠকের সম্পর্কের জায়গা তৈরি হোক। আমার চাওয়া একটাই, যত প্রতিকূল সময়ই আসুক না কেন, বইপড়া, ভাবনা বিনিময় আর সাহিত্যচর্চা যেন আমাদের তরুণ প্রজন্মের পথচলার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়। বই হোক আমাদের মুক্তির হাতিয়ার, পরিবর্তনের হাতিয়ার।’

ঔপন্যাসিক শফিক রিয়ান বলেন, ‘আমি চাই এবারের বইমেলা হোক প্রাণবন্ত আর সবার জন্য স্বস্তিদায়ক। নতুন বইয়ের গন্ধে ভরে উঠুক চারপাশ। লেখক আর পাঠকের আড্ডা থাকুক খোলামেলা পরিবেশে। পর্যাপ্ত বসার জায়গা, পরিচ্ছন্নতা আর শিশুদের জন্য আলাদা আয়োজন থাকলে ভালো লাগবে। সব মিলিয়ে বইমেলা যেন হয়ে ওঠে জ্ঞান আর আনন্দের মিলনমেলা।’

কবি ও কথাশিল্পী রায়হান আহমেদ তামীম বলেন, ‘প্রতি ফেব্রুয়ারিতে লেখক ও পাঠকদের জন্য ঈদের মতো আনন্দ নিয়ে আসে একুশে বইমেলা। তবে চলতি বছর নির্বাচন ও পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে মেলা এগিয়ে আনা হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশকদের জন্য যেমন উদ্বেগের, তেমনই লেখকদের কাছেও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। তবুও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবেই দেখা উচিত। মেলা এগিয়ে আসায় সম্ভাব্য যেসব সমস্যা বা জটিলতা দেখা দিতে পারে, তা প্রকাশক, লেখক, পাঠক এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সচেতন সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে এলে এবারের মেলাও সকল আশঙ্কা কাটিয়ে জমজমাট হয়ে উঠবে বলে মনে করি।’

এসইউ/জিকেএস

Read Entire Article