দীর্ঘদিন ধরে স্নাতক ভর্তিতে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে এ দাবির প্রেক্ষিতে কোনো ধরনের পদক্ষেপ প্রশাসনকে নিতে দেখা যায় নি। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ দাবি আদায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আরও জোরালো আওয়াজ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। কোটায় পোষ্যদের বাড়তি সুবিধাসহ আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে অবিলম্বে এ পোষ্য কোটা বাতিল চাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ছোটবেলা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকার কারণে পোষ্যরা তুলনামূলক বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর ওপর কোটার সুবিধা যেন ‘সুবিধার উপর সুবিধা’ দেওয়া হচ্ছে। অনেকে পোষ্যকোটাকে বৈষম্যমূলক, আবার অনেকে নব্য জমিদারি প্রথার মতো মনে করছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, অন্য কোটার তুলনায় পোষ্য কোটায় বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই কোনো রকম ন্যূনতম মার্কস পেয়ে পাস করে থাকেন। ফলে শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটির সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করা হয়ে থাকে। তাই শাবিপ্রবি প্রশাসনের অতি শিগগির পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩-২৪ সেশনে কোটায় ৫৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে দলিত কোটায় (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী / জাতিসত্তা বা হরিজন) ২০ জন, পোষ্য কোটায় ১৫ জন, প্রতিবন্ধী কোটায় ১০ জন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় ৯ জন, চা শ্রমিক কোটায় তিনজন এবং খেলোয়াড় কোটায় দুজন ভর্তি হয়েছেন। এর আগেও প্রতিবছর ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত ১০ নভেম্বর শাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা এবং পোষ্য কোটা বাতিলসহ পাঁচ দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এ দাবির সঙ্গে অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তাও একমত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে শিক্ষার্থীদের এ দাবির প্রেক্ষিতে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা পোষ্য কোটার বিষয়ে এ প্রতিবেদককে জানান, পোষ্য কোটার ফলে মেধাবীদের আসন সংখ্যা কমছে না। এ কোটার জন্য আলাদা আসন রয়েছে। এ সুযোগ থাকায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সন্তানদের পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
পোষ্য কোটার বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী কবীর বলেন, কোটা প্রণয়ন করা হয় সাধারণত সুবিধাবঞ্চিতদের সুযোগ দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সন্তানরা সুবিধাবঞ্চিত বলে আমার মনে হয় না। উল্টো খুব সম্ভবত ছোটবেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকার কারণে তারা তুলনামূলক বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন। এটা সুবিধার ওপরে আবার সুবিধা দেওয়ার মত হয়ে যাচ্ছে। পোষ্য কোটাতে ভর্তির হারও অনেক বেশি, যার কারণে হয়তো কোয়ালিটির সঙ্গে কম্প্রোমাইজও করা হচ্ছে অনেক সময়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পোষ্য কোটার যে রীতি, তা বাদ দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর এক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের পরে এখনো পোষ্য কোটা থাকাটা আমাদের জন্য লজ্জার। কোটা বিরোধী আন্দোলনে আমরা পোষ্য কোটাকে তীব্র ভাবে ঘৃণা দেখিয়েছি। পুরো বাংলাদেশের বেশিরভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু জায়গায় এখনো তা বহাল তবিয়তে আছে। বিশেষ করে, শাবিপ্রবির মতো জায়গায় এতগুলো সিন্ডিকেট সভা হলেও এ বৈষম্যমূলক কোটা কেন বাতিল হলো না এটাই আমাদের প্রশ্ন।
পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মমিন উদ্দিন বলেন, বর্তমান সময়ে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো জায়গায় পোষ্য কোটা থাকা আমার কাছে নব্য জমিদারি প্রথার মতোই মনে হয়। এখানকার কারো সন্তান সুবিধাবঞ্চিত না যে তাদের কোটায় ভর্তি করাতে হবে। যতদ্রুত সম্ভব এ কোটা বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
কোটা বাতিলের দাবি প্রেক্ষিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এগুলো নিয়ে এখন কোনো চিন্তাভাবনা নাই। আমরা আগে ভর্তি পরীক্ষার কাজ শুরু করি। এ বিষয়ে পড়ে চিন্তা করবো।
গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এ কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরাও একাধিকবার দাবি তুলেছেন। এছাড়া গত রবিবার (৮ ডিসেম্বর) প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা থাকছে না বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
নাঈম আহমদ শুভ/আরএইচ/এএসএম