সেই ২০ বছর আগে হাবিব ওয়াহিদের সংগীত পরিচালনায় উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী আশা ভোসলের কণ্ঠে একটি গান নতুনভাবে প্রাণ পায়। সেই গানটি ‘একটা দেশলাই কাঠি জ্বালাও’। এই গানে কণ্ঠ দিয়ে গায়িকা হিসেবে রাজকীয় অভিষেক হয়েছিল আজমেরী নির্ঝরের। একজন নিভৃতচারী মানুষ তিনি। সবসময়ই আলোচনা ও প্রচারের আড়ালে থাকার চেষ্টা করেছেন।
অনেক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েও তিনি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন শোবিজ থেকে। কিন্তু কেন? সেই উত্তর জানেন কেউই। সাধারণত এমনটা হয়, ক্রেজ ফুরিয়ে গেলেন অনেক তারকাই নিজেকে সরিয়ে রাখেন সবরকম আলোচনা থেকে। কেউ কেউ হতাশায় নিরবে নিভৃতে জ্বলেন। কিন্তু নির্ঝরের ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। তিনি যখন যে গান গেয়েছেন সেটিই লুফে নিয়েছেন শ্রোতারা। ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে থেকে তবে কেন সব আলো নিভিয়ে দিলেন এই গায়িকা, সেটি এক রহস্যই বটে।
ফ্রান্স প্রবাসীকে বিয়ে করে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন নির্ঝর
নির্ঝরের সংগীতচর্চা শুরু হয়েছিল নজরুলসংগীত দিয়ে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে হাতেখড়ি। তবে মূলধারার সংগীতে তিনি নজরে আসেন ২০০৫ সালে যখন হাবিব ওয়াহিদের সুরে ‘একটা দেশলাই কাঠি জ্বালাও’ গানটি নতুনভাবে প্রকাশিত হয়। গানের মূল শিল্পী ছিলেন আশা ভোঁসলে। কিন্তু হাবিবের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে নির্ঝর নিজের স্বর আর আবেদন দিয়ে এই গান দিয়ে তরুণ শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেন।
এরপর একে একে প্রকাশিত হয় তার তিনটি একক অ্যালবাম। সেগুলো হলো ‘পোড়ামুখী’ (২০০৩), ‘সূর্যমুখী’ (২০০৫), ‘স্বপ্নমুখী’ (২০১২)। এরমধ্যে ‘স্বপ্নমুখী’ অ্যালবামের ‘আরাধনা’ গানটি বেশ প্রশংসা কুড়ায়।
এছাড়া হৃদয় খানের সুরে ‘জানি একদিন চলে যাবো’ ও ‘আজকের এই নিশি’ গান দুটি দিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন নির্ঝর। বিশেষ করে ‘জানি একদিন চলে যাবো’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় সব শ্রেণির শ্রোতাদের কাছে।
আপাতত গানে ফেরার ইচ্ছে নেই নির্ঝরের
অত্যন্ত মেধাবী নির্ঝর অবশ্য কখনোই গানকে জীবনের প্রধান আগ্রহ বানাননি। তিনি গানের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও ছিলেন নিয়মিত। করেছেন বেশ ভালো চাকরিও। ২০০৫ সালের পর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান লন্ডনে। সেখানে ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটি (বর্তমান মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি) থেকে এমবিএ করেন। এরপর অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটি থেকে এসিসিএ (ACCA) সম্পন্ন করেন।
২০১০ সালে দেশে ফিরে আবারও কিছুদিন সক্রিয় থাকলেও এরপর ধীরে ধীরে আড়ালে চলে যান। স্থায়ী হন ফ্রান্সে। সেখানে গড়ে নিয়েছেন নতুন জীবন। গেল বছরের নভেম্বরে খবর আসে বিয়ে করেছেন নির্ঝর। বর ফেনীর ছেলে জাহেদ আহমেদ মামুন। যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মূলত তিনি ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক।
বর্তমানে ফ্রান্সের ইমিগ্রেশন বিভাগে ৪টি ভাষার ট্রান্সলেটর হিসেবে কর্মরত আছেন নির্ঝর।
তার গানে ফেরাটা প্রায় অনিশ্চিত। শোনা গিয়েছিল চলতি বছর স্বামীকে নিয়ে দেশে বেড়াতে আসবেন শিল্পী। তবে এখন পর্যন্ত তার দেশে আসার খবর মেলেনি।
এলআইএ/এমএস