কোলন ক্যানসার সম্পর্কে জানুন

10 hours ago 3
আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নানা ধরনের ক্যানসার হতে পারে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অনেক সময় উপেক্ষিত হলো কোলন ক্যানসার। অনেকেই এই রোগ সম্পর্কে জানেন না বা গুরুত্ব দেন না, কারণ প্রাথমিক অবস্থায় এর কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু সময়মতো ধরা পড়লে এটি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্ভব।  আরও পড়ুন : মাইগ্রেনের ৭ অজানা কারণ আরও পড়ুন : রাতে না খেলে কমবে ওজন! জানুন পুষ্টিবিদের মত চলুন, আজ সহজভাবে জেনে নিই কলন ক্যানসার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য। কোলন ক্যানসার প্রথমেই জেনে নেওয়া জরুরি কলন ক্যানসার কী। কোলন ক্যানসার হলো এক ধরনের ক্যানসার যা আমাদের বৃহদান্ত্র বা কোলন-এ শুরু হয়। অনেক সময় এটিকে ‘কোলোরেক্টাল ক্যানসার’ বলা হয়, কারণ এটি শুধু কোলনেই নয়, রেকটাম বা মলদ্বারেও শুরু হতে পারে। সব কোলোরেক্টাল ক্যানসারের মধ্যে প্রায় ৭০% কেস কোলনে শুরু হয়। কোলন ক্যানসারের ধরন কোলন ক্যানসারের কয়েকটি ধরন রয়েছে। এর পার্থক্য হয় কোষের ধরন এবং কোথায় এটি তৈরি হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে। সবচেয়ে সাধারণ ধরন হলো : Adenocarcinoma : এটি কোলন বা রেকটামের ভিতরে থাকা মিউকাস (শ্লেষ্মা) তৈরি করা কোষে শুরু হয়। সাধারণ না হলেও আরও কিছু ধরনের টিউমার থেকেও কোলন ক্যানসার হতে পারে, যেমন- - লিম্ফোমা - কারসিনয়েড - সারকোমা - গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্ট্রোমাল টিউমার কোলন ক্যানসারের বিভিন্ন স্টেজ ক্যানসারের স্টেজ জানলে চিকিৎসা এবং রোগীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মোট পাঁচটি স্টেজ আছে — স্টেজ ০ থেকে স্টেজ ৪ পর্যন্ত। স্টেজ ০ : ক্যানসার কেবল অন্তরের ভিতরের স্তরেই আছে, একে carcinoma in situ বলে। স্টেজ ১ : ক্যানসার কোলনের মিউকোসা ও মাংসপেশিতে ছড়িয়েছে, তবে লিম্ফ নোড বা শরীরের অন্য অংশে যায়নি। স্টেজ ২ : ক্যানসার কোলনের দেয়ালে বা পাশের টিস্যুতে ছড়িয়েছে, কিন্তু লিম্ফ নোডে নয়। স্টেজ ৩ : ক্যানসার লিম্ফ নোডে ছড়িয়েছে, কিন্তু শরীরের দূরের অংশে নয়। স্টেজ ৪ : ক্যানসার লিভার, ফুসফুস বা অন্য অঙ্গে ছড়িয়েছে। কোলন ক্যানসারের উপসর্গ প্রথম দিকে অনেক সময় কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো : - কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া - পায়খানায় রক্ত - পায়খানার রঙ বা আকারে পরিবর্তন - মলদ্বার থেকে রক্তপাত - ওজন হ্রাস (কারণ ছাড়াই) - পেট ব্যথা বা অস্বস্তি - অতিরিক্ত ক্লান্তি - পায়খানা সম্পূর্ণ না হওয়ার অনুভব এই উপসর্গগুলো অনেক সময় অন্যান্য সাধারণ রোগেও হতে পারে। তবে যদি ৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোলন ক্যানসার কেন হয়? এই ক্যানসারের নির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি, তবে কিছু ঝুঁকির কারণ বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন- জেনেটিক কারণ। জেনেটিক মিউটেশন বা বংশগত কিছু পরিবর্তন এই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন : - Familial Adenomatous Polyposis (FAP) - Gardner’s Syndrome - Lynch Syndrome - Cystic Fibrosis এইসব অবস্থায় পলিপ নামে ছোট ছোট টিউমার হয় যা পরে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। আগেই পলিপ কেটে ফেললে ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। যাদের ঝুঁকি বেশি - বয়স ৫০ বছরের বেশি - আগে পলিপ বা অন্ত্রের রোগ থাকলে - পরিবারে এই ক্যানসারের ইতিহাস - কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা বা অস্ত্রোপচার - আফ্রিকান-আমেরিকান বা আশকেনাজি ইহুদি বংশোদ্ভূত হলে ঝুঁকি বেশি এ বিষয়ে যেসব প্রশ্ন প্রায়ই করা হয় ১. কোলন ক্যানসার কি ভালো হয়ে যায়? হ্যাঁ, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে অপারেশন করে পুরো ক্যানসার তুলে ফেলা সম্ভব। ২. এটা কি দ্রুত ছড়ায়? সাধারণত এই ক্যানসার ধীরে ধীরে ছড়ায়। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরও পড়ুন : শরীরের ৯ লক্ষণে বুঝবেন অতিরিক্ত চিনি খাচ্ছেন কিনা আরও পড়ুন : বারবার খাবার গরম করা নিয়ে যা বলছেন পুষ্টিবিদ ৩. স্টেজ ১ কতটা খারাপ? স্টেজ ১-এ অনেক সময় লক্ষণ থাকে না। তবে কিছু লক্ষণ যেমন পায়খানার অভ্যাসে পরিবর্তন, ক্লান্তি বা ওজন কমা দেখা দিতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কোলন ক্যানসার এমন এক রোগ যা প্রাথমিক অবস্থায় নীরব থাকতে পারে, কিন্তু সময়মতো ধরা পড়লে সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়। নিয়মিত স্ক্রিনিং, সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।  সূত্র : হেলথ লাইন
Read Entire Article