যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি, হামলার পরিকল্পনা ও ছাত্রলীগ পুনর্বাসন করার অভিযোগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের ফোনে প্রায় ২০টির মতো আইডি থেকে নানা ধরনের নাশকতার পরিকল্পনার প্রমাণ পান তারা।
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের যবিপ্রবি শাখার সাবেক সভাপতি সোহেল রানার নির্দেশে আটক দুজন এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছিলেন।
রোববার (১৭ আগস্ট) রাত সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন শিক্ষার্থীরা।
আটক হওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা হলেন- ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং ওই বিভাগের ছাত্রলীগের সহসভাপতি নাইম আশরাফি সজীব এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াদ রায়হান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল আনুমানিক রাত ৯টার দিকে রিয়াদ রায়হানের আচরণ সন্দেহজনক দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তার ফোন চেক করে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করা, কিছু শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরিকল্পনাসহ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের প্রমাণ পান তারা। তার মোবাইলের মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখেন আরেক ছাত্রলীগ নেতা নাইম আশরাফীর সঙ্গে ক্যাম্পাস নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথোপকথন।
তারা জানান, পরে শিক্ষার্থীরা ওই ছাত্রলীগ নেতাকেও ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখন তারা ক্যাম্পাস নিয়ে নানা পরিকল্পনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্বীকারোক্তি দেন। ক্যাম্পাস নিয়ে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে পিটিআর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফিরোজ কবির, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা, ছাত্রলীগ কর্মী জহিরুল ইসলাম সাগরসহ পিইএসএস বিভাগ ছাত্রলীগের অনেকেই জড়িত থাকার প্রমাণ পান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, এ ছাড়াও তারা বিভিন্ন রকম ফেক আইডি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হুমকি প্রদান করেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের পুলিশে সোপর্দ করেন তারা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মী রিয়াদ রায়হান তার স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আমি ছাত্রলীগ থেকে বের হয়ে আন্দোলন করি। জুলাই পরবর্তী সময়ে আবার তাদের কয়েকজনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কথা বলি। বেশ কয়েকজন ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কাজ শুরু করতে চায় বিশেষ করে জহিরুল ইসলাম সাগর, মোহাম্মদ রাফি, নাইম আশরাফি সজীবসহ ওদের অনুসারী কয়েকজন। ফেক আইডি খুলে পোস্টের জন্য হুমকির জন্য আমি ক্ষমা চাই। আপনারা ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করবেন না, যারা আগে করতেন তারা নিষিদ্ধ সংগঠনের কাজ করে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করবেন না। আমি আমার ভুল বুঝতে পারলাম। ছাত্রলীগের যবিপ্রবি শাখার সভাপতি সোহেল রানাসহ কারও সঙ্গে আর কথা বলবো না বা কোনো পরিকল্পনা করব না।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফেক পেজ, এমনকি ছাত্রলীগের পেজের মাধ্যমে হুমকি আসে। পরে আমরা জানতে পারি ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে কতিপয় ছাত্রলীগ কর্মী। তারা কিছুদিন ধরে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির গোপন চেষ্টা চালাচ্ছিল। শনিবার রাতে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী দুই সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেন। পরে তাদের কাছ থেকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনার নানা প্রমাণ মেলে। শিক্ষার্থীরা সেই প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রশাসনের সহায়তায় তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন।
আরও পড়ুন : কবুতরও ‘দুধ’ দেয় কিন্তু কীভাবে
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. রাফিউল হাসান কালবেলাকে বলেন, গতকাল যে দুজনকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয় তাদের সব ধরনের মব জাস্টিস থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে সেজন্য আমরা পুরো সময় তাদের সঙ্গে ছিলাম। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়াল বডির মাধ্যমে লিখিতভাবে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. উমর ফারুক কালবেলাকে বলেন, আমরা কিছু শিক্ষার্থীর মাধ্যমে জানতে পারি একজন ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে পারে এমন কিছু তথ্য আদান-প্রদান করছে। তখন ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডি উপস্থিত হয়। পরে তার মোবাইলের সূত্র ধরে আমরা আরেকজনকে ধরতে সক্ষম হই। পরবর্তীতে তাদের লিখিতভাবে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত কালবেলাকে বলেন, আটক দুজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। পরবর্তীতে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব।