ভালো দাম পাওয়ার আশায় নওগাঁ থেকে রাজধানীর ভাটারা ১০০ ফিট এলাকার কোরবানির পশুর হাটে এক হাজার ২৪৬ কেজি ওজনের একটি গরু নিয়ে এসেছিলেন বিরেন। কালো রঙের গরুটিকে হাটের লোকজন ডাকছিলেন ‘কালাপাহাড়’ নামে। প্রথমদিকে গরুটির দাম চাওয়া হয় ১২ লাখ টাকা। এরপর ১০ লাখ টাকায় নেমে আসেন। তাতেও ক্রেতা না পাওয়ায় ৭ লাখ টাকায় বিক্রির চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্রেতারা গরুটির দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বলেন। প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ‘কালাপাহাড়’ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন গরুটির মালিক।
শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে জাগো নিউজকে বিরেন বলেন, অনেক আশা করে গরুটি ঢাকায় নিয়ে এসেছিলাম। বাড়িতে ছেলে-মেয়ে আছে। সবাইকে বলে এসেছি গরু বিক্রি করে বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়বো। ঢাকা থেকে আমাদের বাড়িতে যেতে ১২ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। গরু বিক্রি করতে না পারায় হাট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নওগাঁ ফিরে যাচ্ছি। বাড়িতে সবাই অপেক্ষায় আছে, একসঙ্গে ঈদ করার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা ৪ জন (৩ ভাই ও এক বোন জামাই) মিলে গরুটি নিয়ে এসেছিলাম। বিক্রি হলো না। এখন তো কিছু করার নেই। বাড়িতেই ফিরে যেতে হবে। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আরও মাস দুই লাল-পালন করবো। তারপর বিক্রি করবে, এমন আশা আছে।
ক্রেতারা দাম কতো বলেছেন—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা প্রথম দাম চেয়েছিলাম ১২ লাখ টাকা। এরপর গতকাল ১০ লাখ টাকা দাম চেয়েছিলাম। আজ সকাল থেকে ৭ লাখ টাকা দাম চেয়েছি। কিন্তু ক্রেতারা কেউ দাম বলে ৩ লাখ, কেউ বলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এই গরু কি সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব, বলেন। এই দামে গরু বিক্রি করলে বাড়ির জমি বিক্রি করে চলতে হবে। এতো লোকসানে তো আর গরু বিক্রি করা যায় না। যাহোক কিছু করার নেই। বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করেছে। এখন হাট থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবো।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিরেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা লাইভ ওজন মেপে দেখেছি গরুটির ওজন ১ হাজার ২৪৬ কেজি। সাড়ে তিন বছর ধরে গরুটি তারা লাল-পালন করছি। প্রতিদিন গরুটির খাওয়ার পেছনে ৭০০-৮০০ টাকা খরচ হয়। বুধবার সকালে গরুটি নিয়ে হাটে আসি।
বিরেন যেখানে গরুটি নিয়ে অবস্থান করছিলেন, তার পাশেই একই সাইজের একটি সাদা গরু নিয়ে আসেন ময়মনসিংহের আবু তাহের। তিনি গরুটির নাম দেন ‘সাদাপাহাড়’। প্রথমদিকে আবু তাহের সাদাপাহাড়ের দাম চেয়েছিলেন ১২ লাখ টাকা। তবে গতকাল তিনি ৭ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি করে দেন।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিরেন বলেন, সাদা রঙের যে গরুটি ছিল সেই গরু ৭ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ওই গরুর থেকে আমাদের গরুর মাংস ৩০-৪০ কেজি বেশি হবে। অথচ আমাদের গরুর দাম বলা হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ক্রেতারা এমন দাম বললে হতাশ হওয়া ছাড়া তো উপায় নেই।
তিনি আরও বলেন, গরুটি নওগাঁ থেকে আনতে ১৬ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে। এখন ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাকের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন আরও ১৬ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। হাটে এতো কষ্ট করে থাকার সঙ্গে এখন এই ৩২ হাজার টাকাও লোকসান গুনতে হবে।
এমএএস/এমকেআর/জেআইএম