খরগোশের খাঁচায় স্বপ্ন, চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়

3 days ago 8

দেশি-বিদেশি নানা জাতের পাখির হাট বসে রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরে। প্রতি শুক্রবার জমে ওঠে এই হাট। শাহ্ আলী স্কুলের সামনের সড়ক থেকে শুরু হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথজুড়ে বিস্তৃত থাকে হাটের আয়োজন। দূর-দূরান্ত থেকে খাঁচায় পাখি আসে এই হাটে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম পুরো এলাকা।

হাট ঘুরে যেটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে, তা হলো কবুতরের আধিক্য। দেশি-বিদেশি নানা জাতের কবুতরের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন আকার, রং ও বৈচিত্র্যে ভরপুর এসব কবুতর অনেকের নজর কাড়ে। কবুতর থেকে শুরু করে টিয়া, ময়না, বাজরিগার, কাকাতুয়া, ঘুঘুসহ দেখা মেলে হরেকরকম পাখি। বিশেষত বিদেশ থেকে আনা পাখির রং-গঠন ও জাতিগত বৈচিত্র্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। পাখির দাম চাহিদা ও রঙের ওপর নির্ভর করে, তবে দাম কখনো কখনো আকাশ ছোঁয়া।

jagonews24

যদিও হাটটি মূলত পাখিদের দখলে, তবুও সেখানে চোখে পড়ে কমবেশি বিভিন্ন জাতের মুরগি, বিড়াল আর খরগোশও। চারপাশে পাখির কলকাকলির মাঝে মাঝে অন্য প্রাণীর উপস্থিতিও বাড়িয়ে তোলে হাটের বৈচিত্র্য। পাখির হাট ঘুরে হঠাৎ চোখে পড়ে এক কোণে রাখা দুটি খাঁচায়। আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলে দেখা যায়, খাঁচার ভেতরে কয়েকটি খরগোশ মেতে আছে দৌড়ঝাঁপে।

খাঁচার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ ক্রেতাদের কাছে খরগোশের নানা বৈশিষ্ট্য ও যত্নের ব্যাপারে তথ্য দিচ্ছেন। কথার ভিড়ে তাকে বলতে শোনা গেল, ‌‘এই খরগোশটি কিন্তু গর্ভবতী।’ খাঁচার ভেতর প্রাণচঞ্চল খরগোশগুলোর ছোটাছুটি আর নিষ্পাপ চাহনি যেন মুহূর্তেই মন ছুঁয়ে যায়। পাখির হাটে এসে এমন ভিন্ন দৃশ্য যেন দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি চমক।

আগ্রহ নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলতে বেরিয়ে আসে দারুণ এক উদ্যোক্তার গল্প। তার নাম মো. গগণ হাসান। গ্রামের বাড়ি বরিশালে হলেও বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। জীবিকার তাগিদে সেখানকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। শুধু চাকরির আয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি গগণ, বাড়তি উপার্জনের আশায় ছাদ ভাড়া নিয়ে শুরু করেন একটি ছোট খামার। নিজের সীমিত সময় আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন নতুন স্বপ্ন।

চাকরির পাশাপাশি অবসর সময় খামারেই কাটে তার। ছাদের ওপর গড়ে ওঠা এই ক্ষুদ্র খামারে তিনি পালন করছেন দেশি-বিদেশি প্রায় ৩০টি খরগোশ। বিদেশি জাতগুলোর মধ্যে জাপানি খরগোশই বেশি। খরগোশ ছাড়াও তার খামারে আছে দেশি মুরগি ও কিছু পাখি।

ছোট উদ্যোগটি মোটেও শখ নয় বরং গত তিন বছর ধরে নিয়মিত পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফসল। চাকরির পাশাপাশি খামার সামলানো সহজ কাজ নয়। তবুও তিনি দুটো দিকই দক্ষতার সঙ্গে মেলাতে শিখে গেছেন। তার এই কাজে পরিবারের সদস্যদের অবদানও অনেক। তারাও সহযোগিতা করেন।

jagonews24

শুক্রবার তার সাপ্তাহিক ছুটি। শুক্রবারেই বসে মিরপুর ১ নম্বরে পাখির হাট। তাই ছুটির দিনকে কাজে লাগিয়ে প্রতি সপ্তাহেই নিজের খামারে পালিত খরগোশ, মুরগি কিংবা পাখি বিক্রির জন্য চলে আসেন এই হাটে। গগণ হাসান বলেন, ‘গার্মেন্টসের চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে ৩ বছর ধরে এই কাজ করছি। পরিবারের সবাই আমার পাশে আছে, সহযোগিতা করছে প্রতিটি ধাপে। প্রতি সপ্তাহেই মিরপুরের এই হাটে খরগোশসহ অন্য প্রাণী নিয়ে আসি।’

খরচ ও লাভের বিষয়ে জানতে চাইলে এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘দেশি জাতের একজোড়া খরগোশ ৬০০ টাকা এবং বিদেশি জাতের জোড়া ১ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি করি। হাটে যেহেতু পাখি বেশি, তাই খরগোশের আছে আলাদা চাহিদা। দেশি মুরগিও ভালো দামেই বিক্রি হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘খরগোশ পালনে খরচ খুব বেশি হয় না। খাবার হিসেবে ঘাস, কমলি শাক, ভাত ও ভুষি দিই। এসব স্বাভাবিক খাবারেই খরগোশ সুস্থভাবে বড় হয়। তাই এই প্রাণী পালন করলে আয়টা একটু বেশি হয়।’

সব খরচ বাদ দিয়ে গগণ হাসান প্রতি মাসে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে সক্ষম হন। এতে পরিবারে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য যেমন এসেছে; তেমনই নিজের স্বপ্নপূরণের পথেও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন। চাকরির ব্যস্ততা, পারিবারিক দায়িত্ব ও খামারের পরিশ্রম একসঙ্গে সামলে চলা সহজ নয়। তবুও গগণ হাসানের মতো তরুণ উদ্যোক্তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন, ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে যে কোনো স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব।

এসইউ/জিকেএস

Read Entire Article