খাবার ফুরিয়ে আসছে-নেই ইন্টারনেট, ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ লাখ মানুষ

ইন্দোনেশিয়ার বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৬৩১ এ পৌঁছেছে। তাছাড়া আরও অন্তত ৫০০ মানুষ নিখোঁজ আছে। এছাড়া আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাবারের মজুত শেষ হয়ে আসছে। তাছাড়া ইন্টারনেট না থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যোগাযোগ। এদিকে, প্রতিকূল পরিবেশের কারণে উদ্ধারকর্মীরা এখনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে লড়াই করছেন। মালাক্কা প্রণালীতে সৃষ্ট বিরল এক ঘূর্ণিঝড় গত সপ্তাহে দেশটির তিনটি প্রদেশে আঘাত হানে, যা প্রায় ১৪ লাখ মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে সরকারের দুর্যোগ বিষয়ক সংস্থা। এশিয়ার যেসব জায়গায় এবার প্রবল বর্ষণ ও ঝড় আঘাত করেছে ইন্দোনেশিয়া তার একটি। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কাতেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ, উত্তর সুমাত্রা ও পশ্চিম সুমাত্রায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এখনো এসব এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জরুরি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। আচেহ প্রদেশের বাসিন্দা আমালিয়া বলেন, বন্যার পানি অনেকটা সুনামির মতো মনে হয়েছে। আমার দাদির মতে এটা তার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ। রাস্তাঘাট কাঁদা ও আবর্জনায় বন্ধ হয়ে থাকায় ত্রাণকর্মীরা পায়ে হেঁটে ও মোটরসাইকে

খাবার ফুরিয়ে আসছে-নেই ইন্টারনেট, ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ লাখ মানুষ

ইন্দোনেশিয়ার বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৬৩১ এ পৌঁছেছে। তাছাড়া আরও অন্তত ৫০০ মানুষ নিখোঁজ আছে। এছাড়া আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাবারের মজুত শেষ হয়ে আসছে। তাছাড়া ইন্টারনেট না থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যোগাযোগ।

এদিকে, প্রতিকূল পরিবেশের কারণে উদ্ধারকর্মীরা এখনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে লড়াই করছেন।

মালাক্কা প্রণালীতে সৃষ্ট বিরল এক ঘূর্ণিঝড় গত সপ্তাহে দেশটির তিনটি প্রদেশে আঘাত হানে, যা প্রায় ১৪ লাখ মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে সরকারের দুর্যোগ বিষয়ক সংস্থা।

এশিয়ার যেসব জায়গায় এবার প্রবল বর্ষণ ও ঝড় আঘাত করেছে ইন্দোনেশিয়া তার একটি। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কাতেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার আচেহ, উত্তর সুমাত্রা ও পশ্চিম সুমাত্রায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এখনো এসব এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জরুরি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

আচেহ প্রদেশের বাসিন্দা আমালিয়া বলেন, বন্যার পানি অনেকটা সুনামির মতো মনে হয়েছে। আমার দাদির মতে এটা তার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ।

রাস্তাঘাট কাঁদা ও আবর্জনায় বন্ধ হয়ে থাকায় ত্রাণকর্মীরা পায়ে হেঁটে ও মোটরসাইকেলে করে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

পশ্চিম সুমাত্রায় টুইন ব্রিজ ল্যান্ডমার্কে খননযন্ত্র দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করা দেখছিলেন মারিয়ানা নামে একজন। তার আশা যে তিনি তার পনের বছর বয়সী ছেলেসহ পরিবারের নিখোঁজ সদস্যদের খুঁজে পাবেন।

মারিয়ানা বলেন, খননযন্ত্র দেখছি আর ভাবছি, ওরা যখন আমার ছেলেকে খুঁজে পাবে, তখন সে কেমন অবস্থায় থাকবে। সে কি অক্ষত থাকবে? আমার মা, আমার দেবর, সম্ভবত তাদের চেহারাটাও বোঝার মতো উপায় থাকবে না।

বহু মানুষ এখনো খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকেই বলেছেন তারা দুই-তিনদিন ধরে কিছু খাননি।

উত্তর সুমাত্রার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি হলো মধ্য তাপানুলি। সেখানকার অধিবাসী মায়াসানতি বিবিসিকে বলেছেন যে তার এলাকায় ত্রাণকর্মীদের পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে।

মায়াসানতি বলেন, সবকিছু শেষ। খাবার শেষ হওয়ার পথে। এমনকি, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস নিয়ে মারামারি হচ্ছে। আমাদের খাদ্য ও চাল দরকার। আমাদের দিকে আসার পথ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। ইন্টারনেট ও বিশুদ্ধ পানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে তাকে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়েছে।

মধ্য আচেহ এলাকায় কর্তৃপক্ষ স্টারলিংক ডিভাইস দিয়েছে। সেখানে মানুষের লম্বা সাড়ি দেখা গেছে। তারা তাদের প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন বা মোবাইল ফোনে চার্জ দিচ্ছিলেন।

মার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, পাঁচদিন ধরে সিগন্যাল নেই। নেটওয়ার্কের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার মাকে ফোন দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখনো পারিনি।

উদ্ধার তৎপরতা বাড়ছে, কিন্তু একই সাথে সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে অসন্তোষও বাড়ছে। সমালোচকরা বলছেন, বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি ছিল দুর্বল। খাদ্য সাহায্য বিতরণে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিও সামনে আসছে।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর সুমাত্রা পরিদর্শন করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে কিছু এলাকা এখনো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। তবে সংকট কাটিয়ে উঠতে সবকিছু করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রাবোও সুবিয়ান্তো বলেন, আমরা দৃঢ়তা ও সংহতি নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা করছি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাতি হিসেবে আমরা এখন শক্তিশালী।

পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে গত সপ্তাহের বন্যা ও ভূমিধ্বসে প্রায় ১২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় মারা গেছেন ৩৫৫ জন। অন্যদিকে থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা ১৭৬ ছাড়িয়েছে।

তবে এই বন্যার জন্য আবহাওয়ার একক কোনো বিষয় দায়ী নয়। বরং বলা হচ্ছে, আবহাওয়াজনিত বিভিন্ন কারণ এই বন্যার জন্য দায়ী। বিবিসি ওয়েদার বলছে, একটি কারণ হলো উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু। এটি সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ফেলে।

এর জেরে উত্তর-পূর্ব দিকে বাতাস বয়ে আসে যা সমুদ্র থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয় ও বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টি হয়।

শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। তবে ঝড়টি দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে ভারতের দক্ষিণ পূর্ব এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। মালয় উপত্যকায় সুমাত্রা ও থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার একই ধরনের প্রভাব ফেলেছে। প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে।

বলা হচ্ছে, সেনিয়া একটি বিরল ধরনের ঝড়। ওই এলাকায় এভাবে সাধারণত ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় না।

ভিয়েতনামেও গত কয়েক সপ্তাহে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। টাইফুন কোটোর শেষাংশ ভিয়েতনাম উপকূলের দিকে আসতে থাকা আর বর্ষণ ও অতিরিক্ত বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন থেকে আরও ঝড় বা ঘূর্ণিঝড়ের আশংকা করা হচ্ছে না। তারপরেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এমন ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসএএইচ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow