খাল হলেও গুরুত্ব সাগর সমান
পানামা ক্যানেল, ছোট্ট এক খাল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। আজ তা পৃথিবীজুড়ে বাণিজ্য, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বিশ্ব বাণিজ্যের গতিপথ পরিবর্তন করেছে এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
১৮শ শতাব্দীর শেষদিকে, স্পেনীয় অভিযাত্রীরা পানামার জলপথ পরীক্ষা করেছিলেন। তবে, প্রথম ফরাসি প্রকৌশলীরা খাল নির্মাণের চেষ্টা করেন, কিন্তু তারা ব্যর্থ হন। পরে ১৯০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র পানামাকে স্বাধীন করতে সাহায্য করে এবং খালের নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। ১৯১৪ সালে খালটি চালু হয়। আগে যে জাহাজগুলোকে দক্ষিণ আমেরিকার কেপ হর্ন ঘুরে যেতে হতো, খালটি চালুর পর আর ঘুরতে হয় না।
পানামা খাল বিশ্বের দুই বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক ও প্রশান্তকে যুক্ত করেছে। ফলে জাহাজ চলাচলের সময় ও দূরত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এটি খাল হলেও এর গুরুত্ব সাগরের সমান। এটি প্রায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) দীর্ঘ। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ শতাংশ বাণিজ্য এ পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। খালটির মাধ্যমে আমেরিকা, এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গতিশীল হয়েছে। এমনকি, এই খালটি বিশ্বের অন্যতম বড় ও সুপারসাইজড জাগাজগুলোর জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।
পানামা খালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব। এটি শুধু একটি আঞ্চলিক জলপথ নয়, বরং বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। এটি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার জাহাজের চলাচলের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিকে সক্রিয় রেখেছে এ খাল।
খালটি নির্মাণের পথ ছিল কঠিন। নির্মাণকালে অনেক শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন। ফরাসি প্রকৌশলীরা ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপর ১৯৭৭ সালে, অনেক বিতর্কের পর পানামা খালটির নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।
কিন্তু পানামা খাল নির্মাণ সহজ ছিল না। এর নির্মাণকালীন হাজার হাজার শ্রমিকের প্রাণহানি, ফরাসি ব্যর্থতা ও দীর্ঘ রাজনৈতিক টানাপড়েনের পরেও খালটি বিশ্বকে এক করতে পেরেছে। হয়ে উঠেছে বিশ্বের হৃদপিণ্ড। ১৯৭৭ সালে দীর্ঘ রাজনৈতিক উত্তেজনার পর শেষ পর্যন্ত খালটির নিয়ন্ত্রণ পায় পানামা। তবে সম্প্রতি মার্কিন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ খাল দখলের তোড়জোর শুরু করেছেন। তথ্য: সিএনএন