টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইসহসহ খালাসপ্রাপ্ত ১০ আসামিকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিষয়টি জানা যায়। বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত ২৩ জুলাই এই আদেশ দেন। সেই সঙ্গে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার নথিও তলবের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
খালাসপ্রাপ্ত ১০ আসামির মধ্যে আমানুর রহমান খান রানার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা রয়েছেন। অন্যরা হলেন, সানোয়ার হোসেন সানু, নাসির উদ্দিন নূরু, বাবু, ফরিদ হোসেন, মাসুদুর রহমান, আলমগীর হোসেন চাঁনে। মামলা চলাকালে দুই আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা ও মো. সমীর মিয়া কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
হাইকোর্টের এই আদেশ রোববার (১১ আগস্ট) ডাকযোগে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ও চিফ জুডিসিয়াল আদালতে পৌঁছায়। তবে মঙ্গলবার বিষয়টি জানা যায়। উভয় আদালতের সংশ্লিষ্ট বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের কপি পাওয়ার বিষয়টি মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে।
নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতে মামলার রায় হয়। সেখানে দুইজন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ হয়। কিন্তু মামলার মূল আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ ১০ আসামি বেকসুর খালাস পান। এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিলের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই আমি নিজে উচ্চ আদালতে আপিলের উদ্যোগ নেয়। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটরি অনুবিভাগ আমাকে গত ২৬ জুন নিজ দায়িত্বে ও নিজ খরচে ফৌজদারি রিভিশন মামলার অনুমতি দেয়। অনুমোদন পাওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ জুলাই বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চে নিহতের ছেলে আহমেদ মজিদ সুমনের আপিল আবেদনের শুনানি হয়। এতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জুলফিকার আলম ও বাদি পক্ষে ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে অংশ নেন। টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল হাসান বহুল আলোচিত ফারুক হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। মোহাম্মদ আলী ও কবির হোসেন নামে দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। মোহাম্মদ আলী ১০১৪ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর ফারুক হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দিতে এই হত্যার সঙ্গে আমানুর রহমান খান রানা ও তার ভাইদের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি পলাতক রয়েছেন। অপর দণ্ডিত কবির হোসেন ২০১৪ সাল থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামক দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে অন্য আসামিদের তথ্য সামনে আসে।
আব্দুল্লাহ আল নোমান/এমএন/এএসএম