খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে এই কর্মবিরতি চলছে। এতে সকাল থেকে রোগীদের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) সভাপতি ডা. আরাফাত হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া শুরু করেছে যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি আত্মঘাতী। আমরা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যখাতের বিপ্লব সাধনের জন্য ৫ দফা দাবি পেশ করেছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের এই কর্মবিরতি চলবে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি-
১. এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না। বিএমডিসির উক্ত আইনের বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে ও বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন শুধু এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে। ২০১০ সালে হাসিনা সরকার ম্যাটসদেরকে বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া শুরু করেছে, এই ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
২. উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওটিসি ড্রাগ লিস্ট আপডেট করতে হবে। এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া অন্য কেউ ওটিসি ড্রাগ লিস্টের বাইরে ড্রাগ প্রেসকিবেল করতে পারবে না। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিগুলো ওটিসি লিস্টের বাইরে কোনো ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না।
৩. স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসনে- দ্রুত ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে সকল শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করে পূর্বের মতো সপ্তম গ্রেডে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিবছর ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যখাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ডাক্তারদের বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে।
৪. সকল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ও মানহীন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজসমূহ বন্ধ করে দিতে হবে। ইতোমধ্যে এসএসসি পাস করা (ম্যাটস) শিক্ষার্থীদের স্যাকমো পদবি রহিত করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলেন, এই ৫ দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চললেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার রয়েছে। তারা আমাদের দাবি পূরণের কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না। তাদের এই উদাসীনতায় আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা মনে করি, তারা আমাদের দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের অন্যান্য সকল মেডিকেল কলেজের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকগণ আজ (২৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জাতীয় একটি ইস্যুতে কর্মবিরতি পালন করছে। তাদের এই দাবি যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে কর্মবিরতিতে যাতে রোগীদের কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়। যাতে প্রত্যেকটি রোগী সুচিকিৎসা নিশ্চিত হয় সে জন্য আমরা মিড লেভেলের চিকিৎসক যেমন সহকারী রেজিস্ট্রার এবং অনারারি মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল অফিসারকে আরও অ্যাকটিভ হয়ে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছি যাতে কোনো রোগীর কোনো সমস্যা না হয়।