খুলনার রাজনীতির মাঠে সক্রিয় বিএনপি নেতা পারভেজ মল্লিক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত নাম পারভেজ মল্লিক। যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার পরিচিতি দীর্ঘদিনের।
সম্প্রতি খুলনা-৪ আসনে ব্যাপক গণসংযোগ, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং স্থানীয় নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করেছেন তিনি। তার ঘন ঘন এলাকায় অবস্থান, তরুণ প্রজন্ম ও নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারণা চালানো ইঙ্গিত দেয় মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে জোরালো অবস্থানে আছেন তিনি।
বিশেষত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। পাশাপাশি নিজ নির্বাচনি এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক মানবিক কাজে অংশ নিয়েছেন। তার এ মানবিক উদ্যোগে সুবিধাভোগীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তার সাফল্য কামনা করেছেন।
পারভেজ মল্লিকের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মাধ্যমে। তিনি সেখানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ’৯০ দশকের ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে বিএনপির প্রবাসী রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বিশেষ করে লন্ডনভিত্তিক কেন্দ্রীয় বিএনপির নানা গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির প্রবাসী নেতৃত্ব থেকে মাঠ পর্যায়ে ফিরে এসে সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া কিছুটা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এটি পারভেজ মল্লিকের রাজনৈতিক পরিকল্পনার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
খুলনা-৪ আসন ঐতিহ্যগতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এলাকা। এখানে একাধিকবার দলবদল, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পরিবর্তন দেখা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ এখানে এগিয়ে থাকলেও, বিএনপি বরাবরই একটি শক্তিশালী ভিত্তি ধরে রেখেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদ্য সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল এবার এ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী। বিএনপি নির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হেলাল ধানের শীষের দাবিদার। তবে ক্রমেই এ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের মনে জায়গা করে নিচ্ছেন পারভেজ মল্লিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে তিনি রূপসা, দিঘলিয়া ও তেরখাদা উপজেলায় ব্যাপক গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘পারভেজ মল্লিক নিজেকে একজন আধুনিক রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছেন। তার প্রচারণায় প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার ও তরুণ সমাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব ও এই অঞ্চলের মানুষের মৌলিক চাহিদার বাস্তবায়ন এবং জীবনমান উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সক্রিয় উপস্থিতি এবং রাজনৈতিক বার্তাগুলোতে উন্নয়ন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের অধিকারকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি, এমনটাই বলছেন নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু না করলেও, পারভেজ মল্লিকের আগাম প্রস্তুতি নজর কেড়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। তার সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বের দক্ষতা, এবং প্রবাসে দলের প্রতিনিধিত্ব তাকে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে বলেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিমত।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সান্নিধ্য তার জন্য প্লাস পয়েন্ট বলে দাবি স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত, স্থানীয় ভারসাম্য এবং নির্বাচনী সমীকরণের ওপর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পারভেজ মল্লিক কালবেলাকে বলেন, আমি দেশের বাইরে থাকলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে বরাবরই সংযুক্ত ছিলাম। আমি যেহেতু বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এ আসনে যখন যাকে মনোনয়ন দিয়েছে আমি তার পক্ষেই কাজ করেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাবার পর দেশে ফিরে এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের জন্য কাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, এ আসনে অন্যান্য যারা প্রার্থী আছেন তারাও কাজ করছেন। আমি বলছি না এই আসনে আমিই যোগ্য। সার্বিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় দল প্রার্থীদের মূল্যায়ন করবে। তবে আমি শতভাগ আশাবাদী খুলনা-৪ আসনে দল আমাকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে তেরোখাদা, রুপসা ও দিঘলিয়াবাসীর সেবা করার সুযোগ দেবে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। দেশের জনগন এখন ভোট দিতে আগ্রহী। আগামী নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে ভোট দিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় আনবে বলে আশব্যাক্ত করেন তিনি।