খেলার মাঠ ও পার্ক দখলমুক্ত করার দাবিতে নাগরিক সমাবেশ

2 days ago 9
স্থাপনা নির্মাণের নামে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দখল হওয়া মাঠ ও পার্ক উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবিতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ এবং লংমার্চ করেছেন পরিবেশবাদীরা। বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যানের সামনে জমায়েত হয়ে তারা এমন দাবি জানান। পরে লংমার্চ করে তারা আনোয়ারা উদ্যান থেকে কারওয়ান বাজার সংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্কে যান। সেখানে আগে থেকে পান্থকুঞ্জ রক্ষায় অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা পরিবেশকর্মীদের ওপর লংমার্চে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাবেশে পরিবেশবাদীরা শিশুদের খেলাধুলার পাশাপাশি জনসাধারণের হাঁটাচলার জন্য রাজধানীর আনোয়ারা পার্ক ছাড়াও পান্থকুঞ্জ পার্ক, তাজউদ্দীন আহমদ পার্কসহ ওসমানী উদ্যান, ধানমন্ডি মাঠ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় তাদের হাতে ‘দূষণমুক্ত ঢাকা চাই’, ‘পান্থকুঞ্জ পার্কে পিলার স্থাপন বাতিল করো’সহ নানা লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও গ্রিন ভয়েসসহ কয়েকটি সংগঠন আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান একজন পরিবেশকর্মী। তাকে অবিলম্বে স্থাপনার নামে পরিবেশ ধ্বংস করা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন পার্কে থাকা গাছ সংরক্ষণেরও দাবি জানান তারা। বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, আনোয়ারা উদ্যানসহ দেশের সকল মাঠ ও পার্ক সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দিতে হবে। মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করণের জন্য পার্ক-মাঠ ও উদ্যান থেকে সকল নির্মাণসামগ্রী অপসারণ করে খেলার ও চলাচলের পরিবেশ নিশ্চত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আনোয়ারা উদ্যানের চারদিকে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এখানকার ছাত্রদের উন্মুক্ত বায়ু সেবনের এই উদ্যান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা দ্রুতই এই নির্মাণ সামগ্রীর অপসারণের দাবি জানাই। বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ফার্মগেটে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ছিল এলাকার মানুষের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। একসময় হাজারো মানুষ ছোট্ট উদ্যানটিতে হাঁটাচলা করতো, শিশুরা খেলতো, কম আয়ের মানুষ ক্লান্তি দূর করতে জিড়িয়ে নিত। এই উদ্যানটিতে মেট্রোরেলের স্টেশন করায় এখানকার সকল গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু মেট্রোরেলের কাজ শেষ হওয়ার পরেও অফিস এবং অবকাঠামো রাখায় বন্ধ রয়েছে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি বিজড়িত উদ্যানটি। বছর কয়েক আগেও ফার্মগেটের গা ঘেঁষা ছোট্ট এ উদ্যানটি ছিল সবুজ গাছ গাছালিতে ভরা। পান্থকুঞ্জ পার্কে এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজের ফলে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন হয়েছে। পার্কের গাছ কেটে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক স্থাপনা। সমাবেশ শেষে কারওয়ান বাজার সংলগ্ন পান্থকুঞ্জে লংমার্চ পৌঁছায় সোয়া ১২টার দিকে। সেখানে লংমার্চ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। ওই সময় পান্থকুঞ্জ পার্কে ২১ দিন ধরে অবস্থান করা নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’–এর সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব হ্যান্ডমাইক নিয়ে তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি লংমার্চকারীদের কাছে জানতে চান, তারা এত দিন কোথায় ছিলেন? এত দিন পরে কীসের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন? হ্যান্ডমাইকে রাজিবের এসব কথাবার্তার ফলে দুপক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে আমিরুল রাজিব বলেন, কর্মসূচি পালনের জন্য বাপা ও গ্রিন ভয়েস টাকা দিয়ে লোকজন ভাড়া করে এনেছে। এরপরই গ্রিন ভয়েস তেজগাঁও কলেজ শাখার সদস্যরা আমিরুল রাজিবসহ সেখানে অবস্থানকারীদের ঘিরে ধরেন। তাদের ধাক্কা দিতে শুরু করেন এবং একপর্যায়ে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এভাবে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে কয়েক দফায় পান্থকুঞ্জে অবস্থানকারীদের ওপর লংমার্চকারীরা হামলা চালান। বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব দাবি করেন, তারা পান্থকুঞ্জ পার্কে এক্সপ্রেসওয়ের পিলার না যাওয়ার দাবিতে ২১ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময়ে বাপা থেকে কেউ সেখানে যাননি। তা ছাড়া ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যান আগামী ২৫ মার্চ খুলে দেওয়া হবে বলে সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে। তাহলে কেন তাদের এই আন্দোলন? বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, গাছ রক্ষা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে এসেছিলাম। ভাড়া করে লোক এনেছি, ছবি তুলতে এসেছি—এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়েছে। আমাদের হেয়প্রতিপন্ন করতে ও আন্দোলনটা সফল করতে তারা এমনটি করেছেন।
Read Entire Article