‘মুজিবের ভিটায় তালেবানি ফতোয়া, বাজারে যেতে পারবেন না মহিলারা’- এমন শিরোনামে গত দুদিন ধরে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ভারতীয় মিডিয়াগুলো। টুঙ্গিপাড়ার গওহরডাঙ্গা মাদরাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মেলায় স্বেচ্ছাসেবীদের শৃঙ্খলারক্ষা ও গণজমায়েত এড়াতে দেওয়া এক ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তুলছেন ভারতীয় সাংবাদিকেরা।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৭ নভেম্বর গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় তিন দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর এ মাহফিলে দুই লাকের বেশি মানুষের সমাগম হয়। মাহফিলকে ঘিরে পাশে গড়ে উঠে খাবারসহ বিভিন্ন রকমের দোকান। সেখানে এক ধরনের মেলায় পরিণত হয়। মাহফিলের শৃঙ্খলারক্ষা ও গণজমায়েত এড়াতে এলাকার নারীদের দোকানে না আসার অনুরোধ করে মাইকিং করেন স্বেচ্ছাসেবীরা। প্রতিবছর মাহফিলে না আসার জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা এভাবে অনুরোধ করে থাকেন।
সেই ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, দোকানদার ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে, মাহফিল চলাকালীন সময়ে কোনো দোকানদার মহিলাদের কাছে কিছু বিক্রি করবো না। যদি কোনো মহিলা আসে তাদের সুন্দর করে বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিবেন। এছাড়াও নামাজ চলাকালীন সময়ে সকলে দোকানের পর্দা নামিয়ে দোকান বন্ধ রেখে নামাজে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে।
মেলায় স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া সেই অনুরোধের ভিডিওকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে ‘মুজিবের ভিটায় তালেবানি ফতোয়া, বাজারে যেতে পারবেন না মহিলারা’ শিরোনামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ভারতের মিডিয়াগুলো।
ফারহান লাবিব নামে মাহফিলের এক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, এমন অনুরোধ প্রতিবছর মাহফিলে করা হয়। শেখ হাসিনার আমলেও অনুষ্ঠিত মাহফিলে করা হয়েছে। যে ভিডিওটি ভারতীয় মিডিয়া প্রচার করছে তার কোনো সত্যতা নেই। এখানে মহিলাদের বাজারে যেতে নিষেধ করা হয়নি। মাহফিলে চলাকালীন সময়ে মাহফিলের মেলায় না আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বর্তমানে মহিলারা এলাকার বাজারে গিয়ে তারা তাদের দৈনন্দিন কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কাজকর্ম করছেন।
টুঙ্গিপাড়া এলাকার রোজিনা নামে এক নারী বলেন, আমাদের বাজারে না যাওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আমরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছি। গওহরডাঙ্গা মাদরাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের মেলায় মহিলাদের না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। আমরাও যাই না। এ বছরও করেছে।
গওহরডাঙ্গা মাদরাসার দপ্তর সম্পাদক মাওলানা রেজাউল হক বলেন, ভারতীয় মিডিয়ার দাবিটি সঠিক নয়। তারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে কখনো এমন ঘোষণা দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র মাহফিলের মেলায় না আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাদের এ মিথ্যা প্রোপাগান্ডার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, স্বাধীন রাষ্ট্রে সব নাগরিকের স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার রয়েছে। সেখানে নারীদের বাজারে না যাওয়ার কথা বলারতো প্রশ্নই ওঠে না। ভারতীয় মিডিয়াগুলো একের পর এক মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আশিক জামান অভি/আরএইচ/এএসএম