গণজাগরণ মঞ্চের নেতা কুবির তারুণ্যের উৎসবে সদস্যসচিব!

2 hours ago 3

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তারুণ্যের উৎসব। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। তবে অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের সাবেক নেতা আওয়ামীপন্থি এক শিক্ষককে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পাওয়া ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব। ২০০৯ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন তিনি। যোগদানের পরই জড়িয়ে পড়েন আওয়ামীপন্থি নীল দলের রাজনীতিতে। ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতিও। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ করে দেশব্যাপী আন্দোলন চলে। এরই অংশ হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকরা গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সেসব কর্মসূচিতে ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুবকে ব্যানারের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। একটি ব্যানারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী, ইসলামি বক্তা ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতেও দেখা গেছে তাকে।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কুবিতেও নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। বিতর্কিত শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাহবুবকে ছাত্র পরামর্শক দপ্তরের পরিচালক করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক শীর্ষ ব্যক্তির আস্থাভাজন হওয়ায় বারবার তাকে নতুন নতুন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ১৮তম ব্যাচের নবীণ বরণ অনুষ্ঠানেও তাকে আহ্বায়ক করা হয়। সবশেষ তারুণ্যের উৎসবের মতো মেগা অনুষ্ঠানে তাকে আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব করা হয়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, এ মুহূর্তে দায়িত্ব পালন করার মতো যোগ্য লোক নেই। যে কারণেই ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুবকে গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের নেতা কুবির তারুণ্যের উৎসবে সদস্যসচিব!

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষক নেতা ও ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করীম বলেন, ‘যোগ্য লোক নেই—এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই। তবে প্রশাসন হয়তো কোনো কারণে ওনার ওপর ডিপেন্ড করেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভালো বলতে পারবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মানুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুবকে যখন ছাত্র বিষয়ক পরামর্শক দপ্তরের পরিচালক করা হয়, তখনো আমরা এর বিরোধিতা করেছি। ভিসি স্যারের কাছে তথ্য-প্রমাণসহ তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছি। তিনি প্রকাশ্যে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর ছিলেন। কীভাবে এসব পদ পান সেটাই বুঝে আসে না।’

তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ইসলাহি। তিনি বলেন, ‘ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব স্যারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জবাব দেবে।’

এ বিষয়ে তারুণ্যের উৎসবে সদস্যসচিব ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব জাগো নিউজকে বলেন, আমি রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে চাই। তবে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে একাত্মতার বিষয়ে জনতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর আহ্বায়ক আবু রায়হান জাগো নিউজকে বলেন, স্বৈরাচার বিদায়ে আমরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছি। ফলে দেশে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এখন যদি স্বৈরাচারের দোসরদের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়, তাহলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যারা এসবের মধ্যে লিপ্ত রয়েছেন, আগামীতে তাদের খেসারত দিতে হবে।

জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/এএসএম

Read Entire Article