বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, দেশে এমন কিছু শক্তির উত্থান ঘটছে যা গণতন্ত্রের চর্চা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, যে শক্তিগুলোর উত্থান আমরা দেখছি, সেটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক, গণতন্ত্রের চর্চার জন্যও বিপজ্জনক এবং মানুষের যে ধর্মীয় চেতনা সেটার জন্যও বিপজ্জনক।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিইএবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা কামনায় এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৮তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখানে মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, আবার টেলিভিশনে নাটক দেখে, গান শোনে- এটাই আমাদের সাংস্কৃতিক বাস্তবতা। কিন্তু আপনি যখন সবকিছু একপাক্ষিক করবেন, তখন ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। আর ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত রূপ হলো উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র ধর্মীয় রাজনীতির বিকাশ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী প্রশ্ন তোলেন, রাষ্ট্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আঁতাতে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূলের কোনো গভীর নীল নকশা তৈরি হচ্ছে কি না- এটা আজ মানুষের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- আরও পড়ুন
- বিএনপি নির্বাচিত হলে শেখ হাসিনার বিচার আরও ত্বরান্বিত হবে
- জাপা-তৃণমূল বিএনপি ঘুরে এখন তিনি এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী
তিনি অভিযোগ করেন, ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে, যার মালিকের সঙ্গে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এটা কি অনিয়ম নয়?
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সরকারি কোনো প্রেসের মাধ্যমে ব্যালট পেপার ছাপানো যেত। কিন্তু তা না করে ব্যক্তিগত প্রেসে ছাপানো হয়েছে। এমন অনিয়ম দেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পর্যন্ত দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিষয়ে রিজভী বলেন, ঢাবির উপাচার্য কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে- সাবেকরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মানেই সারাজীবনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মিক সম্পর্ক থাকে। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো জায়গা নয়।
তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনকে একচেটিয়া করতে সরকারপন্থি কিছু মানুষের সঙ্গে আঁতাত করে ভিসি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভূমিকা পালন করছেন।
যারা অতীতে অভ্যুত্থানে ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন নতুন একটি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চান মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, তারা সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। বিএনপি চর্চা করে দেশের মাটি-মিশ্রিত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কৃতি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ইসলাম প্রচার করতে চায়, অথচ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক আগেই। তারা যদি মওদুদি মতবাদ প্রচার করতে চায়, তাহলে জনগণেরও মতামত রয়েছে।
রিজভী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিলে এমন এক মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে চাইছে, যেখানে বলা হচ্ছে- আমরা আওয়ামী লীগকে তাড়িয়েছি, এবার বিএনপিকেও ঘায়েল করতে হবে। এটা কি তাদের কোনো গভীর নীল নকশার অংশ নয়?
তিনি মনে করেন, একপাক্ষিক কিছু হলে সমাজে নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদের জন্ম নেবে, যা জাতীয় চেতনাকে ধ্বংস করে দেবে।
কেএইচ/কেএসআর/জিকেএস