গরমে আয় কমেছে শ্রমিকদের

3 months ago 16

দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা শ্রমিকদের। একটানা কাজ করতে পারছেন না তারা। ফলে বন্দরে ট্রাকে পণ্য উঠানামায় দেখা দিয়েছে ধীরগতি। একই সঙ্গে কমে গেছে শ্রমিকদের আয়।

তারা বলছেন, আগে যেখানে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা আয় হতো, সেখানে এখন ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

যশোর মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, যশোরে টানা তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুর আড়াটায় ৩৭ দশমিক ৩, সোমবার ৩৯ দশমিক ২, রোববার দুপুর ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে ৪-৫ দিন ধরে যশোরে গরমের তীব্রতা বেড়েই চলেছে।

jagonews24
তীব্র গরমে নাজেহাল শ্রমিকরা বিশ্রাম নিচ্ছেন

বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক সর্দার আজগার আলি বলেন, এই গরমে ২৫-৩০ মিনিটের বেশি একটানা কাজ করা যাচ্ছে না। দুপুরে তো কোনো কাজ করাই সম্ভব হচ্ছে না।

সুমন হোসেন নামের এক শ্রমিক বলেন, অন্যান্য সময় সারাদিন কাজ করে ৭০০-৮০০ টাকা আয় করতাম। এখন ২০০-৩০০ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুন:

আরেক শ্রমিক খায়ের হোসেন বলেন, আগে ২০ জন শ্রমিক তিন ঘণ্টায় একটি ট্রাকের পণ্য আনলোড করতাম। এখন সময় লাগছে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। অনেকে গরমে কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

বন্দরে পণ্য বোঝাই করতে আসা ট্রাকচালক অলিয়ার রহমান বলেন, গরমে শ্রমিকরা আগের মতো কাজ করতে পারছে না। এতে সময় মতো লোড হচ্ছে না ট্রাক। তাই আমাদেরও সময় অপচয় হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্দরে বসে থাকতে হচ্ছে।

বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের লেবার সর্দার মুনছুর আলি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার বেশি গরম পড়েছে। শ্রমিকরা লাগাতার কাজ করতে পারছে না। পণ্য উঠানামায় দেরি হচ্ছে, ব্যবসায়ীরাও বিরক্ত। কিন্তু করার কিছু নেই।

আরেক লেবার সর্দার আকতার হোসেন বলেন, বেলা ১১টার পর থেকে মনে হয় আগুনের ফুল্কি এসে শরীরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। তারপরও গরম উপেক্ষা করে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের আয়ও কমে গেছে।

jagonews24
গরমে অসুস্থ এক শ্রমিকের মাথায় পানি দেওয়া হচ্ছে

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, এক ট্রাক লোড দেওয়ার পর বিশ্রাম নিয়ে আবার আরেক ট্রাক লোড দিচ্ছেন শ্রমিকরা। এতে যেখানে প্রতিদিন ২০ ট্রাক লোড হতো, সেখানে এখন ৮-১০ ট্রাক লোড করতে পারছেন তারা।

বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের আরেক অংশের সভাপতি মাকসুদুর রহমান রিন্টু বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহে শ্রমিকরা কাজ এগিয়ে নিতে পারছেন না।

শ্রমিকরা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়েন এজন্য ইউনিয়ন অফিস থেকে খাবার পানি এবং স্যালাইন সরবরাহ করা আছে বলে জানান তিনি।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় শ্রমিকদের আয় গত সপ্তাহ থেকে এ সপ্তাহে কমে গেছে। আগে যেখানে ৭০০-৮০০ টাকা আয় হতো শ্রমিকদের। এখন সেখানে ২০০-৩০০ টাকা হচ্ছে।

যশোরের নাভারন ফজিলাতুননেছা সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক ইউনুচ আলি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে জেলায় শুরু হয়েছে তীব্র দাবদাহ। তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেছে। যা মানুষ ও প্রাণীর জন্যে বিপদজনক। বৈরী পরিস্থিতিতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বাড়ছে যশোরের তাপমাত্রা। এতে বিপাকে পড়েছেন বন্দর শ্রমিকরা। খেটে খাওয়া এই মানুষগুলো বেলা ১১টার পর থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। দুপুর থেকে আগুনের হলকা ছাড়ছে প্রকৃতি। এতে পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বন্দরে পণ্যজট কমাতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার।

তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে শ্রমিকরা বন্দরে কষ্ট করে কাজ করছেন। তাদের কথা চিন্তা করে বন্দরের ভেতর আলাদা বিশ্রাম নেওয়ার ঘর করা আছে। আছে খাবার পানির ব্যবস্থা। তারা কাজের ফাঁকে ফাঁকে সেখানে বিশ্রাম নিয়ে থাকেন।

মো. জামাল হোসেন/জেডএইচ/জেআইএম

Read Entire Article