গাইবান্ধার হাটে গরু বেশি, ক্রেতা কম

3 months ago 9

দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। কিন্তু গাইবান্ধায় এখনো জমেনি পশুর হাট। হাটে গরুর পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও ক্রেতাদের আনাগোনা কম। আগে ঢাকা থেকে ক্রেতা ও ব্যাপারীরা এলেও এবার সেটি হয়নি। এতে গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা।

জানা গেছে, বাজারে দেশি গরুর সরবরাহ থাকলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। অন্যদিকে মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি, বড় গরুর চাহিদা কম। অন্যান্য বছর জেলায় গরু কিনতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা ও ব্যাপারীরা এলেও এবার তা চোখে পড়ছে না। স্থানীয় বেপারীদেরও এবার ঢাকায় গরু সরবরাহ করতে আগ্রহ কম। একদিকে গোখাদ্যর দাম বেশি, অন্যদিকে বাজারে গরুর চাহিদা কম। সব মিলিয়ে জেলার খামারিরা বিপাকে রয়েছেন।

জেলার সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর, সাঘাটা উপজেলার হাট ভরতখালী, গোবিন্দগঞ্জ পৌর হাট ও পলাশবাড়ী উপজেলার মাঠের হাটসহ বেশ কয়েকটি কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিভিন্ন রং ও আকারের গরু উঠছে হাটে। আকার ভেদে ৫০ হাজার থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকা হচ্ছে। হাটে গরু দিয়ে ভরপুর কিন্তু ক্রেতা কম। এতে বিক্রেতারা হতাশা ব্যক্ত করছেন। অন্যদিকে হাট ইজরাদারদের হাসিল বেশি নেওয়ার অভিযোগে করছেন অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা।

সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর হাটে গরু নিয়ে আসা কুন্দের পাড়া গ্রামের কৃষক হাসমত প্রমাণিক জানান, এ বছর কোরবানির জন্য পাঁচটি গরু লালনপালন করেছেন। মঙ্গলবার ও শুক্রবার গরু নিয়ে দুটি হাটে যান তিনি। কিন্তু প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় গরু বিক্রি না করে বাড়ি ফিরেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গরুর দাম উঠে ৮০ হাজার টাকা। এই দামে বিক্রি করলে আমার কোনো লাভ থাকবে না। গো-খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে গরু পালতেও খরচ অনেক বেশি হয়েছে।’

সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী হাটে গরু নিয়ে আসা মোবারক আলী জানান, বিক্রির জন্য চারটি দুটি গরু নিয়ে এসেছিলেন। আশা ছিল প্রতিটি গরু ৯০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করবেন। তবে ক্রেতা কম থাকায় একটি গরু ৭০ হাজার টাকা করে দুটি বিক্রি করেছেন ও দুটি গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘গত বছর একই রকম গরু ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলাম।’

আরেক বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে গো-খাদ্যের দাম বাড়তি। গরু পালনে খরচ বেড়েছে অনেক। অথচ কোরবানির সময় গরুর চাহিদা কম। বিক্রি করতে না পারলে আরও এক বছর লালনপালন করতে হবে গরুগুলো। এতে খরচও বাড়বে।’

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খামারি জুয়েল মিয়া বলেন, ‘খামারে শতাধিক গরু রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দেখা নেই। যারা আসছেন তারা এক থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের গরুগুলো কিনছেন। স্থানীয় হাটগুলোতে বড় গরুর চাহিদা কম। হাটে গরু তোলার সাহস পাচ্ছি না।’

এ বছর সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় ভারতীয় গরু আসেনি। ফলে হাটগুলোতে দেশি গরুর প্রচুর সরবরাহ দেখা যাচ্ছে। তার পরও খামারিরা আশানুরূপ দাম না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।

গাইবান্ধার হাটে গরু বেশি, ক্রেতা কম

জেলার সাঘাটার উপজেলার ভরতখালীর পশুরহাটের ইজারাদার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এ হাটে সব চেয়ে বেশি চরাঞ্চলের গরু বেচাকেনা হয়। ক্রেতার সংখ্যার তুলনায় চার-পাঁচ গুণ বেশি গরুর সরবরাহ আছে। অন্যান্য বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা গরু কেনার জন্য আসতেন। এবার বাইরের পাইকাররাও তেমন আসছেন না। ফলে কৃষকসহ খামারিরা অনেকটা বাধ্য হয়েই কম দামে গরু বিক্রি করছেন। তবে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধায় কুরবানির জন্য প্রায় দেড় লাখ গরু প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় খামারের সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার ৩৬৮টি। খামার ও কৃষকের কাছে কোরবানির জন্য ১লাখ ৯৬ হাজার ২৭৭ গবাদিপশু প্রস্তুত আছে। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৫৮টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট থাকবে ৬৯ হাজার ৯৭২টি পশু। পশু কেনা-বেচার জন্য জেলার সাত উপজেলায় কোরবানির স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে হাট বসছে ৪১টি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিক্রেতাদের সহায়তা করতে অনলাইনে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে আগ্রহী বিক্রেতারা যোগাযোগ করছেন।

এ এইচ শামীম/এমএন/জিকেএস

Read Entire Article