গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় গণপিটুনিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। রোববার (২ নভেম্বর) গোবিন্দগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌফিজ উদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শনিবার (১ নভেম্বর) রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার কাঁটাবাড়ি ইউনিয়নের নাসিরাবাদ এলাকায় গরু চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তিনজন নিহত হয়।
হেলালী পাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, রাত ৩টার দিকে গোয়ালঘরে কয়েল জ্বালাতে গিয়ে দেখি আমার তিনটি গরু নাই। গরু ঘরের দেয়াল ভেঙে নিয়ে যায়। এ সময় আমি চোর চোর বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে চোরদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে বাড়ির পাশে ধানের জমির ভেতরে গরু তিনটি পাওয়া যায়। চারদিক থেকে লোকজন লাইট জ্বালিয়ে আলোকিত করে। আমার বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে নাসিরাবাদ এলাকায় শতশত লোক তিনজনকে ধরে মারধর করলে তারা মারা যায়।
হেলালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী হাসান মিয়া বলেন, রাতে চিৎকার শুনে টর্চলাইট নিয়ে ঘটনাস্থলে আসি। পরে আমরা নাসিরাবাদ এলাকায় গিয়ে তিনজন লোক পুকুরে নেমে আছে দেখতে পাই। সেখানে শত শত লোকজন পুকুরের পার থেকে তাদের ইট-পাটকেল মারছে। এরপর সেই তিনজন লোক পুকুর থেকে উঠে আসলে শতশত লোকজন গণপিটুনি দিয়েছে। সেখানেই দুজন মারা গেছে। পরে শুনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা গেছেন।
যমুনাপাড়া গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী আমিনুল ইসলাম বলেন, নাসিরাবাদে আমার মনোহারি দোকান রয়েছে। রাতে চোর চোর বলে চিৎকার শুনে জেগে উঠি। পরে দোকান দেখতে যাওয়ার সময় একটি মিনি পিকআপভ্যান আমার সামনে আসে। তাদের আমি আটকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা আমার ডান হাতে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যায়। তিন থেকে চারজন ছিল সেই গাড়িতে। তবে গরু চোর না ডাকাত সেটা বুঝতে পারিনি। ঘটনাস্থল থেকে আমার দোকান প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে।
হেলালী পাড়া গ্রামের আব্দুল সাত্তার বলেন, রাতে গরু চোর চিৎকার শুনে সালামের বাড়িতে এসে দেখি তার গরু নাই। পরে সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করি। একপর্যায়ে গরু তিনটি পাওয়া যায়। এর আগেও এ গ্রামে কয়েকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। গরু নিয়ে বিপদে আছি। রাত হলেই আতঙ্ক বাড়ে। গত সাতদিন আগেও বগুড়াপাড়া গ্রাম থেকে সাতটি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে চোর। এ এলাকায় চোরের উপদ্রব খুব।
ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলায় কাউকে আটক করা যায়নি। আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার নাম কাউছার আলী। তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দামগাড়া গ্রামের আলিফবর আলীর ছেলে। বাকি দুজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পরিচয় মিললে আইনিপ্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছে রংপুর রেঞ্জের সিআইডির ক্রাইম সিনের একটি ইউনিট।
নিহত কাউছার আলীর মামা মোজাহার আলী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে কাউছার ঢাকায় রিকশা চালাত। মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসত। তবে গত ছয়মাসের মধ্যে সে বাড়িতে আসেনি। তার পাঁচ বছরের একটি মেয়ে সন্তান আছে। কাউছার অতীতে চুরি বা ডাকাতি কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল না।
গাইবান্ধা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কলের) এবিএম রশিদুল বারী বলেন, একটি চোর চক্র হেলালী পাড়ায় আব্দুস সালামের বাড়িতে গরু চুরি করতে গেলে এলাকার লোকজন তাদের গণপিটুনি দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনকে মৃত অবস্থায় পায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যায়। হত্যার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

15 hours ago
8









English (US) ·