গাছ লাগানো সদকায়ে জারিয়া

13 hours ago 7
পৃথিবীতে মানুষের জীবনধারণ ও বসবাসের জন্য আল্লাহ যত নেয়ামত দান করেছেন, তার অন্যতম হলো গাছ। গাছ আমাদের ফল-ফসল দেয়, ফুল দেয়, ছায়া দেয়, কাঠ দেয়—এটা আমরা বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখি। আর বিজ্ঞানের কল্যাণে জানতে পেরেছি গাছ আমাদের আরও অনেক উপকার করে। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি। আর আমাদের শরীর থেকে যে কার্বন ডাইঅক্সাইড বের হয়, তা শুষে নেয়। এভাবে গাছ আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, পরিবেশে ভারসাম্য আনে। একটি গাছ বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডেরও বেশি ক্ষতিকারক গ্যাস শোষণ করে এবং ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। আর যেখানে গাছ বেশি থাকে সেখানে বৃষ্টিও বেশি হয়। গাছ থেকে আমরা কাঠ পাই, যা দ্বারা আসবাবপত্র তৈরি করি। ঔষধি গাছ থেকে আমরা ওষুধ বানাই। ফুল গাছ আমাদের আঙিনা সুন্দর করে; রং-বেরঙের ফুল আমাদের হৃদয় রাঙিয়ে দেয়। বিভিন্ন মৌসুমে নানান রকম ফলের স্বাদে-ঘ্রাণে আমরা বিমোহিত হই। এ ছাড়া আমরা আরও কতশত উপকার লাভ করি গাছ থেকে। মোটকথা, পৃথিবী বসবাস উপযোগী থাকা ও মানুষের জীবনধারণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গাছ। ফলে ইসলাম গাছ লাগানোর প্রতি অনেক বেশি উৎসাহিত করেছে, এমনকি একে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য করেছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ শস্যবীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি প্রাণহীন বস্তু হতে প্রাণবান বস্তু নির্গত করেন এবং তিনিই প্রাণবান বস্তু হতে নিষ্প্রাণ বস্তুর নির্গতকারী। হে মানুষ! তিনিই আল্লাহ। সুতরাং তোমাদের বিভ্রান্ত করে কোন অজ্ঞাত দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আর তিনিই ওই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর আমি তা দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদগত করেছি, তারপর তা থেকে সবুজ গাছপালা জন্মিয়েছি, যা থেকে আমি থরে থরে বিন্যস্ত শস্যদানা উৎপন্ন করি এবং খেজুর গাছের ফল-ভারে ঝুলন্ত কাঁদি থেকে পানীয় নির্গত করি এবং আমি আঙুর বাগান উদগত করেছি এবং জায়তুন ও আনারও। তার একটি অন্যটির সদৃশ ও বিসদৃশও। যখন সে বৃক্ষ ফল দেয়, তখন তার ফলের প্রতি ও তার পাকার অবস্থার প্রতি গভীরভাবে লক্ষ করো। এসবের মধ্যে সেইসব লোকের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা ইমান আনে।’ (সুরা আনআম: ৯৫-৯৯)। অন্যদিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো মুসলমান গাছ লাগায়, অথবা কোনো ফসল বোনে আর মানুষ, পাখি বা পশু তা থেকে খায়, এটা রোপণকারীর জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়।’ (বোখারি: ২৩২০)। আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘কেয়ামত পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন গাছটি বেঁচে থাকবে বা তা থেকে উপকার গ্রহণ করা হবে) সে গাছ তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে।’ (মুসলিম: ১৫৫২) এ পৃথিবী আমাদের। এখানে আমরা বসবাস করছি। আমাদের প্রজন্ম এখানেই বেড়ে উঠছে। আমাদের উচিত, আমরা যে পৃথিবীকে পেয়েছি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এর চেয়ে সুন্দর ও চমৎকার পৃথিবী উপহার দেওয়া। তবেই আমরা যোগ্য পূর্বসূরি হতে পারব। আর পৃথিবীকে সুন্দর করতে হলে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দায়মুক্ত হতে চাইলে, আমাদের অবশ্যই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। গাছের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ আরও বাড়াতে হবে। এতে পার্থিব উপকার তো রয়েছেই, পরকালেও রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। আল্লাহতায়ালা তওফিক দান করুন। লেখক: ইমাম ও খতিব
Read Entire Article