ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেওয়া এক সিনিয়র ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার ৯০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য থেকে জানা যায়।
কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতির আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, চুক্তির আওতায় গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত একটি বাফার জোন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ইসরায়েল এই এলাকায় সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তিনটি ধাপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রথম ধাপ:
নারী বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে প্রতিটি বন্দির জন্য ২০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। বন্দিদের তালিকায় দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৪০০ জন ফিলিস্তিনির নাম থাকলেও ফাতাহ নেতা মারওয়ান বারঘৌতির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
দ্বিতীয় ধাপ:
গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলের মতে, বর্তমানে গাজায় ৯৬ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ৬২ জন জীবিত।
তৃতীয় ধাপ:
১৪ মাসের দীর্ঘ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে। গাজা উপত্যকার প্রশাসন একটি নিরপেক্ষ টেকনোক্র্যাট কমিটি পরিচালনা করবে, যাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।
যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা মিশর ও কাতারের তদারকিতে তাদের নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পারবেন। এ ছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ট্রাক সাহায্য গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করবে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির এই আলোচনা নতুন গতি পেয়েছে। উভয়পক্ষই আলোচনায় ইচ্ছুক থাকায় চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে।
তবে হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ইসরায়েলের নতুন শর্ত আরোপের প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গাজার যুদ্ধবিরতি এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি কাছাকাছি বলে দাবি করেছে তারা।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) কায়রোতে হামাস, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়।
এর আগে গত অক্টোবরে সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়া হলেও হামাস তা প্রত্যাখ্যান করে। তবে বর্তমানে আলোচনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলোচনার এ অগ্রগতি গাজার সংঘাত সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।