গাজাবাসীকে গ্রহণে ট্রাম্পের চাপ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান জর্ডানের

3 hours ago 2

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিতে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহকে চাপ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু বাদশাহ আবদুল্লাহ তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

জর্ডানের বাদশাহ বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের না সরিয়েই গাজা পুনর্গঠন করা হবে এবং এই বিষয়ে আরব দেশগুলো একমত। এদিকে, একটি জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ শতাংশ নাগরিক গাজার ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ ও ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বৈঠক করেন ট্রাম্প ও বাদশাহ আবদুল্লাহ। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, গাজা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ও উপত্যকাটির বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে সরানোর পরিকল্পনা তার সরে আসার সম্ভাবনা নেই।

কথা বলার একপর্যায়ে গাজাবাসীদের নেওয়ার ব্যাপারে বাদশাহ আবদুল্লাহর প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চাচ্ছিলেন ট্রাম্প। তখন জর্ডানের বাদশাহ বলেন, আমাদের দেশের জন্য যা সর্বোচ্চ কল্যাণ বয়ে আনবে, সেটাই করা হবে। হ্যাঁ, গাজার দুই হাজার শিশুকে আমরা চিকিৎসার জন্য জর্ডানে নেব। ট্রাম্প তার এই প্রস্তাবের প্রশংসা করেন।

বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, পাল্টা প্রস্তাব নিয়ে আরব নেতারা একে একে ওয়াশিংটনে আসবেন। এই কাজ কীভাবে করলে সবার জন্য ভালো হয়, তা খুঁজে বের করাটাই মূল বিষয়। তবে আমি মনে করি, ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের পরিবর্তে গাজা পুনর্গঠন ও সেখানে মানবিক সহায়তা পাঠানোই এখন অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এসব কথা বলার সময় তাঁর চেহারায় অস্বস্তি ফুটে ওঠে।

এদিকে, ট্রাম্পের গাজা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রস্তাবে আরব দেশগুলো এরই মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, পুনর্গঠনের জন্য গাজাবাসীকে প্রতিবেশী মিশর ও জর্ডানসহ আরও কয়েকটি দেশে পাঠানো হবে। সেখান থেকে তাদের আর গাজায় ফিরতে দেওয়া হবে না ও গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সুন্দর একটি সমুদ্রসৈকতে (রিভেরিয়া) রূপ দেওয়া হবে। ট্রাম্পের দাবি, এই পরিকল্পনার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরে আসবে ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, গাজা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে ও আমরা এটাকে ঢেলে সাজাব। আমরা এই কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের জবাবে ফিলিস্তিনিদের গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে বাস্তুচ্যুত করার বিরুদ্ধে জর্ডানের ‘অবিচল অবস্থান’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলন শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, এটাই আরবদের একীভূত অবস্থান। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করে গাজা পুনর্গঠন করা ও ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সবার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

তবে বাদশাহ আব্দুল্লাহর বিরোধিতা সত্ত্বেও ট্রাম্প মনে করছেন, জর্ডানের পাশাপাশি মিশরও শেষ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীকে নিতে সম্মত হবে। কারণ দেশ দুটি অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তার জন্য ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরশীল।

ট্রাম্প বলেন, আমি বিশ্বাস করি জর্ডানে আমাদের এক টুকরো জমি থাকবে। আমি বিশ্বাস করি মিশরেও আমাদের এক টুকরো জমি থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোথাও আমাদের জন্য সামান্য কিছু জমি থাকতে পারে। আমি মনে করি, আমরা যখন আলোচনা শেষ করবো, তখন আমাদের জন্য এমন একটি স্থান থাকবে, যেখানে গাজাবাসী শান্তিতে ও নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।

এদিকে, প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জর্ডানে ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন বা ১৪৫ কোটি ডলারেরসহায়তা বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, কথা প্রসঙ্গে বলি, আমরা জর্ডানকে বিপুল অর্থ দিয়েছি, মিশরকেও দিয়েছি। এই কথা বলে আমি কিন্তু তাদের হুমকি দিচ্ছি না। আমি মনে করি, আমাদের সম্পর্ক এসব সহায়তার ঊর্ধ্বে।

বাদশাহ আবদুল্লাহ ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগেও গাজাবাসীকে সরিয়ে উপত্যকাটি দখলের ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। গাজা দখলের প্রস্তাবটি প্রকাশ করার পর প্রথম আরব নেতা হিসেবে বাদশাহ আবদুল্লাই মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করলেন।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার মাধ্যমে এমন এক সময় নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, যখন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছে। ট্রাম্পের এই প্রস্তাব আসার পরপরই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত ভঙ্গে অভিযোগ তুলে জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস।

সূত্র: রয়টার্স

এসএএইচ

Read Entire Article