গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে নতুন করে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় দেওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এদিকে, হামাস দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানালেও, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।
হামাস এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ইতিবাচক বার্তা পাঠিয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল ও চ্যানেল ১২ও নিশ্চিত করেছে, ইসরায়েল হামাসের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।
কাতারভিতত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, প্রস্তাব অনুযায়ী- ৬০ দিনের জন্য সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। এ সময় ইসরায়েলি সেনারা গাজার ভেতরে অবস্থান পরিবর্তন করবে, যাতে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারে। একই সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে ৫০ জন ইসরায়েলির মধ্যে ২৫ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে। মধ্যস্থতাকারীরা আশা করছেন, এটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি কায়রোতে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে বৈঠক করার পরই হামাস যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় রাজি হয়। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, যুদ্ধ দ্রুত শেষ হবে এমন নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে, হামাস দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চাইছে, কিন্তু ইসরায়েল কেবল বন্দিমুক্তির জন্য সাময়িক বিরতি দিতেই রাজি। একইসঙ্গে ইসরায়েল গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। একসময় প্রাণবন্ত এই নগরীতে ধারাবাহিক বোমাবর্ষণ চলছে ও লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে গাজা সিটি ঘিরে ‘মিশন সম্পন্ন’ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাত্জ দাবি করেছেন, হামাস কেবল বন্দিমুক্তি নিয়েই আগ্রহী, কারণ তারা গাজা সিটি হারানোর ভয়ে সংকটে পড়েছে।
আরও পড়ুন:
- মিশর-জর্ডান-লেবানন-সিরিয়া নিয়ে ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ চান নেতানিয়াহু
- ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত
- গাজাবাসীর সব ধরনের ভিজিটর ভিসা স্থগিত করলো যুক্তরাষ্ট্র
অন্যদিকে, দখলদার দেশটির কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। তার ভাষায়, হামাস ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তাদের আরেকটি সুযোগ দেওয়া যাবে না।
গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে উপত্যকাটিতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি অবরোধে মানবিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৬০ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য পরিস্থিতি এখন ‘অচিন্তনীয় মাত্রায়’ নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন:
- গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ১৭৬০ জন নিহত
- গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরানোর পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান হামাসের
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলাত্তি রাফাহ সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে যুদ্ধবিরতির বিকল্প নেই। আমাদের জরুরি ভিত্তিতে চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে।
কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাত থামাতে একাধিকবার মধ্যস্থতা করেছে, কিন্তু স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া এক যুদ্ধবিরতি মার্চে ভেঙে দেয় ইসরায়েল। জুলাইয়ে কাতারের রাজধানী দোহায় সর্বশেষ আলোচনাও ব্যর্থ হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন আলোচনার ঘোষণা আশার আলো জাগালেও গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা কঠিন চ্যালেঞ্জই রয়ে গেছে।
সূত্র: আল জাজিরা
এসএএইচ