গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিসহ জাতিসংঘে দুটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রস্তাব দুটি পাস করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিষদে বুধবার গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। এতে সাধারণ পরিষদের ১৯৩ টি দেশের মধ্যে ১৫৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এছাড়া ৯টি সদস্য দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত এবং ১৩টি সদস্য দেশ অনুপস্থিত ছিল।
অধিবেশনে ইউএনআরডব্লিউএর প্রতি সমর্থন এবং ইসরায়েলে জাতিসংঘের সংস্থার কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংক্রান্ত আইনের নিন্দা জানিয়ে আরেকটি প্রস্তাব আনা হয়। এ প্রস্তাবেও ১৫৯টি সমর্থন জানিয়ে ভোট দিয়েছে। এছাড়া ভোট দেওয়া থেকে ১১টি সদস্য দেশ বিরত এবং বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৯ দেশ।
রেজুলেশনে বলা হয়, ইসরায়েলকে ইউএনআরএর ম্যান্ডেটকে সম্মান করতে হবে এবং সরকারকে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। এছাড়া দেশটির প্রতি সংস্থাটির সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত এবং দ্রুত, নিরাপদ ও বাধাহীন মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করতে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।
এসময় উল্লেখ করা হয়, ১৪ মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় ৪৪ হাজার ৮০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত এক লাখ ছয় হাজার ২৫৭ জন।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে। জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে... দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই এ অঞ্চলের ভৌগোলিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেখানে আগে পাহাড় ছিল না, এখন সেখানে পাহাড় হয়ে গেছে। দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো আক্ষরিক অর্থেই এ অঞ্চলের মানচিত্র বদলে দিয়েছে।’