গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফাহ থেকে ১৫টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সংস্থাটির উদ্ধারকর্মীরা এক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছিলেন।
রোববার (৩০ মার্চ) পিআরসিএস এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
রেড ক্রিসেন্টের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে আটজন সংস্থাটির নিজস্ব কর্মী এবং ছয়জন বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য। এ ছাড়া একজন জাতিসংঘের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মী ছিলেন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন এক উদ্ধারকর্মী।
পিআরসিএস জানায়, নিহতরা আহতদের চিকিৎসা দিতে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। ঘটনাটি ঘটে রাফাহর হাশাশিন এলাকায়, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী গোলাবর্ষণ করছিল।
সংস্থাটি আরও জানায়, রেড ক্রিসেন্টের চিকিৎসকদের ওপর এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ইসরায়েল একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে।
পিআরসিএস জানায়, মরদেহগুলো বালির নিচে পুঁতে ফেলা হয়েছিল, যার ফলে উদ্ধার কাজ কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু মরদেহ পচন ধরার কারণে শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে যায়।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইউনিস আল-খাতিব বলেন, ‘মানবিক সহায়তা দিতে যাওয়া কর্মীদের ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। যদি এই ঘটনা অন্য কোথাও ঘটত, তাহলে বিশ্ব এটিকে ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করত।’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, তারা রাফাহ এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স ও অগ্নিনির্বাপক ট্রাকে গুলি চালিয়েছে, কারণ এসব যানবাহনকে ‘সন্দেহজনক’ বলে মনে করা হয়েছিল।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত উদ্ধারকর্মীদের হত্যা করা স্পষ্টতই জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ।’
জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের প্রধান টম ফ্লেচার জানান, ১৮ মার্চ থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করে। এরপর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালানো হয়। এতে রোগীরা হাসপাতালের বিছানায় মারা যান, অ্যাম্বুলেন্সে গুলি চালানো হয়, আর ফার্স্ট রেসপন্ডারদের হত্যা করা হয়।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা চরমভাবে সংকটপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানালেও হামলা অব্যাহত রয়েছে।