গাজার শরণার্থী শিবির এবং হাসপাতালে হামলার ঘটনায় আরও প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছে। মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় ২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ছয় শিশু এবং পাঁচ নারী রয়েছে।
এদিকে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর আগে সেখানকার অবরুদ্ধ কামাল আদওয়ান হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং ড্রোন দিয়ে কামাল আদওয়ানের চারপাশে হামলা চালানো হচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরে বা এর কাছাকাছি যে কোনো চলন্ত বস্তু দেখলেই গুলি করা হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার বাহিনী।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৪ হাজার ৬১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৫ হাজার ৮৩৪ জন।
এদিকে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করা হয়।
সংস্থাটি জানায়, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি ও প্রমাণাদি বিশ্লেষণ এবং কয়েক মাসের তদন্ত ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিবৃতি বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে উল্লিখিত আইনি সংজ্ঞা অনুযায়ী গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে দাবি করেছে তারা।
অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের নিষিদ্ধ পাঁচটি কাজের মধ্যে অন্তত তিনটি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। যার মধ্যে রয়েছে বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের জীবনযাত্রাকে মানবেতর করে তুলেছে।
সংস্থাটির সেক্রেটারি-জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, মাসের পর মাস, ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদেরকে মানবাধিকার এবং মর্যাদার অযোগ্য একটি অবমানবিক গোষ্ঠী হিসাবে আচরণ করেছে, তাদের শারীরিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায় দেখিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থীশিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
- আরও পড়ুন:
- গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল: অ্যামনেস্টি
- গাজার ‘সেফ জোনে’ ইসরায়েলি হামলা, ‘পুড়ে ছাই’ নারী-শিশুসহ ২০ জন
ইসরায়েলি নির্বিচার হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজাবাসী চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
টিটিএন