গাজীপুরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্তৃক বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনার পর গাজীপুর মহানগরীর ৩১নং ওয়ার্ডের ধীরাশ্রম এলাকা কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া গাজীপুরসহ সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হওয়ার খবরে ওই এলাকায় বয়স্ক নারী ছাড়া অন্য নারীরাও বাড়িঘর ত্যাগ করেছেন।
শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে দেখা যায়, আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনের সোনালী রঙের প্রধান ফটকটি বন্ধ রয়েছে। ফটকের সামনে কাঁচের ভাঙা টুকরা ও কয়েকটি সম্মাননা স্মারক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য লাঠিসোঁটা, জুতা ও জামাকাপড় পড়ে আছে। রাস্তাটি দিয়ে লোকজনের চলাফেরা খুবই সীমিত। আশপাশের বাড়িঘরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক নেই। শুক্রবার রাতের ঘটনার পরপরই সবাই পালিয়ে গেছে। কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় কেবল বয়স্ক নারীরা রয়েছেন। নারীরাও অন্যত্র চলে গেছেন। সবার মাঝে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
- আরও পড়ুন-
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ - দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সমাবেশ, সকাল থেকেই উত্তপ্ত গাজীপুর
- গাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুর, স্থানীয়দের মারধরে আহত ১৫
আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনের মসজিদটিও তালাবদ্ধ। জোহরের আযান হয়নি। আশপাশের পরিবেশ নীরব ও নিস্তব্ধ। ধীরাশ্রম-টঙ্গী সড়কের দুই পাশে ঘটনাস্থলের কাছে সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। দিনভর গণমাধ্যম কর্মীদের আনাগোনা ছিল সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর দেওয়া দোতলা দৃষ্টিনন্দন বাড়িটির সামনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, রাতে ছাত্রদের নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। কেউ এগিয়ে গিয়ে ছাত্রদের রক্ষা করতে গেলে তাদেরও নাজেহাল হতে হয়েছে। ছাত্ররা সেখানে লুটপাট ও ভাঙচুর করতে যায়নি। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট ঠেকাতে গিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন একজোট হয়ে ছাত্রদের বেধড়ক পিটিয়েছে। আহত ছাত্রদের হাসপাতালে নিতে গেলেও তারা বাধা দেয়। অভিযানের কথা শুনে বাড়ি ছেড়ে সবাই পালিয়ে গেছে।
শহরজুড়ে আতঙ্ক
শনিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা চলে গেলেও শেষ মুহূর্তে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়কের পাশে এক ছাত্রকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি করে এক দুর্বৃত্ত। মোবাশ্বির হোসেন নামে ওই শিক্ষার্থীর ডান হাতের কনুইয়ের নিচে গুলি লাগে। তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গুলির খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ফের শহরের রাজবাড়ী সড়কে এসে বিক্ষোভ করেন। তারা মিছিল-স্লোগানে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। শিগগিরই ওই দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/জেআইএম