খুলনায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ইট ভাটা। এসব ইট ভাটার অধিকাংশের নেই লাইসেন্স। পরিবেশ ছাড়পত্র থাকলেও নেই নবায়ন। উর্বর জমির মাটি কেটে অবাধে এসব ভাটায় বানানো হচ্ছে ইট। নামেমাত্র অভিযান চললেও টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ভাটাগুলো পুনরায় চালু হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা ইট ভাটাগুলোর অবস্থান জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। আইন মেনে জেলা প্রশাসন অনুমোদন দিলেও বিভিন্ন এলাকায় জনবসতি গড়ে ওঠার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের ছাড়পত্র নবায়ন করতে পারছে না। আর ছাড়পত্র নবায়ন ছাড়াই অদৃশ্য শক্তির জোরে চলছে এসব ইটভাটা।
ভাটাগুলোতে উর্বর মাটি কেটে তা দিয়ে বানানো হচ্ছে ইট। পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরোনো প্লাস্টিক, টায়ার এবং কাঠকয়লা। পুরানো প্লাস্টিক এবং টায়ার পোড়ানোর কারণে নির্গত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের ক্ষতিও হচ্ছে ব্যাপক। ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষ, পশু, পাখি, গাছপালা এবং জলাশয়গুলোর। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিভিন্ন ফসলের ফলনও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
খুলনা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় মোট ১৪৬টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ১০১টির রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। বাকি ৪৫টি ইটভাটার কোনো বৈধতা নেই। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ১৫টি ইটভাটা। সব মিলিয়ে খুলনা জেলায় বর্তমানে চলমান রয়েছে ১৩১টি ইটভাটা। যার মধ্যে ডুমুরিয়ায় ২০, রুপসায় ৬৩, তেরখাদায় ৯, ফুলতলায় ৮, দিঘলিয়ায় ৬, বটিয়াঘাটায় ৫, কয়রায় ৯ ও পাইকগাছায় ১১টি ইটভাটা চলমান রয়েছে। তবে প্রায় ৮০ ভাগ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রের নবায়ন নেই।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনা আইন অনুসারে, আবাসিক এলাকা সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষি জমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাসহ জনবসতিপূর্ণ এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নির্মাণ আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু এ আইনের নেই যথাযথ প্রয়োগ।
একাধিক সূত্র জানায়, অদৃশ্য শক্তির ছত্রছায়ায় খুলনার ইটভাটাগুলো চলছে। অধিকাংশ ইটভাটা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও নামে বেনামে তারা এসব ইটভাটা চালাচ্ছেন। তাদের অপশক্তির জোর এখনো কমেনি। জেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ইটভাটা বন্ধ করে দিলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে তারা পুনরায় ইটভাটা চালু করছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ঘনবসতি এলাকায় অবৈধ ইট ভাটার ক্ষতিকর ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্কদের মধ্যে চর্মরোগের প্রবণতাও দেখা যায়। ধোঁয়ার কারণে ফসল, গাছপালা বিনষ্ট হচ্ছে। জলাশয়ের মাছের ক্ষতি হয়। যার দরুণ মানুষসহ পুরো ইকোসিস্টেমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খুলনা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পারভেজ আহমেদ বলেন, ইট ভাটাগুলো তৈরি হয়েছে বৈধতা মেনে। কিন্তু এখন তা অবৈধ। কারণ লোকালয়ের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা থাকলে তার ছাড়পত্র দেওয়ার বিধান নেই। এজন্য তাদের ছাড়পত্র নবায়ন হচ্ছে না। তারা আইন অনুসারে ইটভাটা স্থানান্তর করলে তাদের পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। কয়েকটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস দিয়ে পানি ঢালা হয়েছে। ইটভাটা কোনো স্থায়ী জিনিস না। ইটভাটা চালাতে হলে তাদেরকে লোকালয় থেকে সরে যেতে হবে।
এফএ/জেআইএম