গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যে কমবে ব্রয়লারের তাপজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি

4 weeks ago 8

গরমে তাপজনিত কারণে ব্রয়লারের খাদ্যগ্রহণ ও বৃদ্ধি কমে মৃত্যুহার বাড়ে। এ সমস্যা মোকাবিলায় গামা-অ্যামাইনোবিউটারিক অ্যাসিড (গাবা) সমৃদ্ধ খাদ্য কার্যকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অধ্যাপক ড. মুহা. ইলিয়াছুর রহমান ভূঁইয়া।

অধ্যাপক ড. মুহা. ইলিয়াছুর রহমান ভূঁইয়া ‘ডেভেলপিং হিট রেসিস্টেন্ট ব্রয়লারস: ইনহেনসিং পারফরম্যান্স উইথ গাবা এনরিচড ফিড’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের সহযোগী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা ব্যাংক পিএলসির অর্থায়নে গবেষণা প্রকল্পটি শুরু করা হয়।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ পরীক্ষামূলক ল্যাব এবং মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায় গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যের কার্যকারিতা সফলভাবে প্রদর্শিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা দাবি করেছেন।

ড. ইলিয়াছুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের ফলে ব্রয়লারের গড় ওজন সাধারণ ব্রয়লারের তুলনায় প্রায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি হয়। পাশাপাশি, খাদ্যের রূপান্তর হার উন্নত এবং গরমে হিট স্ট্রেসের লক্ষণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ফলে, ব্রয়লার মুরগির মৃত্যু হার কমে গেছে।

গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যে কমবে ব্রয়লারের তাপজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি

অধ্যাপক বলেন, গাবা হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যামাইনো অ্যাসিড জাতীয় যৌগ। যা ব্রয়লারের স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাপ ও চাপ কমে গেলে মুরগির গ্রহণ করা খাদ্যের কার্যকারিতা বাড়ে। যা দ্রুত ওজন বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে। এর ফলে মৃত্যুহার কমে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এর স্বাদ ও গন্ধ সাধারণ ব্রয়লার মুরগির মতো নয় বরং দেশি মুরগির মতো হয়ে থাকে। গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যের মাধ্যমে ব্রয়লার উৎপাদের খরচও অনেক কম। গাবা পানিতে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গাবার চকলেট পাওয়া যায়। গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে কথা চলছে যেন খামারিরা উপকৃত হতে পারে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি অ্যান্ড টক্সিকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোছা. শরীফা জাহান লাবনী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ব্রয়লার মুরগির বৃদ্ধির ওপর উচ্চ তাপজনিত প্রভাব মূল্যায়ন করা। তাপ ও চাপের পরিস্থিতিতে ব্রয়লারদের তাপ স্থিতিস্থাপকতা এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করতে গাবাসমৃদ্ধ খাদ্যের সম্ভাবনা যাচাই করা। ডোজের মাত্রা এবং বিতরণ পদ্ধতি বিবেচনা করে গাবা-সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রণয়ন করা এবং বাণিজ্যিক ব্রয়লার উৎপাদন ব্যবস্থায় গাবা-সমৃদ্ধ খাদ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহারিক সুপারিশ প্রদান করা।

তিনি বলেন, ‘গাবা সমৃদ্ধ বিশেষ খাদ্য গ্রহণের ফলে ব্রয়লারের ওজন বাড়ে সঙ্গে পুষ্টি শোষণ ও হজম দক্ষতা বাড়ে। কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন কমায় তাপমাত্রাজনিত মানসিক ও শারীরিক চাপ কমে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোষের ক্ষয়রোধ, প্রদাহ হ্রাস ও ইমিউন সেল শক্তিশালী করতে উপযোগী গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য। এর ফলে রোগের হার ও মৃত্যুহার কমে যায়, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার কমে। একই সঙ্গে উৎপাদন খরচ কম ও অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে লাভের হার বেড়ে যায়।

সহযোগী অধ্যাপক আরও বলেন, বাংলাদেশের গ্রীষ্মকাল ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এ উদ্ভাবন ব্রয়লার শিল্পে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। গাবা-সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রসার ঘটলে দেশের মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি ও খামারিদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে।

আসিফ ইকবাল/আরএই/এমএস

Read Entire Article