ভারী যানবাহন উঠতেই কেঁপে ওঠে সেতু। এই বুঝি গাড়িসহ সেতুটি নদীতে ধসে পড়লো। সেতুর ফাটল ধরেছে। খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। কোথাও নেই লোহার অস্তিত্ব। সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। এমনই চিত্র শরীয়তপুরের কোটাপাড়া সেতুতে।
বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়েই প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে হাজারও মানুষ। এ অবস্থায় নতুন সেতু চালুর দাবি জানিয়েছেন যাত্রী ও চালকরা।
জেলার সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে অদূরে ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নব্বই দশকে নির্মাণ হয় কোটাপাড়া প্রেমতলা সেতু। পরবর্তী সময়ে সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ২০১৭ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে জেলার সড়ক বিভাগ। পদ্মা সেতু চালুর পর শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে যানবাহন আর যাত্রীর চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কথা মাথায় রেখে পাশেই আরেকটি নতুন সেতু তৈরির উদ্যোগ নেয় সড়ক বিভাগ। ১৯০ মিটারের সেতুটির ব্যয় ধরা হয় ৫৮ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ায় কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। তবে নানা জটিলতায় সেতুর কাজ শেষ করেও চালু করা সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে যাতায়াত করছে সব ধরনের ভারী, হালকা যানবাহনসহ স্থানীয়রা। সেতুটিতে গাড়ির চাপ কমিয়ে রাখতে নিযুক্ত রাখা হয়েছে গ্রামপুলিশও। দ্রুত সেতুটি দিয়ে চলাচল বন্ধ না হলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরেজমিন দেখা যায়, সেতুটির বেশিরভাগ রেলিং থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে কঙ্কালসার হয়ে গেছে। কোথাও রড বের আছে, আবার কোথাও নেই রডের অস্তিত্ব। একটি জায়গায় তৈরি হয়েছে বেশ বড় রকমের ছিদ্র। সেতুর নিচে বেশ কয়েক জায়গায় বড় বড় ফাটল দেখা যাচ্ছে। সেতুটিতে গাড়ির চাপ নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন গ্রামপুলিশের দুই সদস্য। দুপাশ থেকে ভারী গাড়ি উঠলেই লাল পতাকা নেড়ে একপাশের গাড়ি থামিয়ে দিচ্ছেন তারা। এতে বিপরীত পাশে যানবাহনের সারি তৈরি হচ্ছে।
সেতুটিতে যানজট নিরসনের দায়িত্বে রয়েছেন সুলাইমান সরদার নামের গ্রামপুলিশের এক সদস্য। তিনি বলেন, ‘বড় গাড়ি উঠলে সেতু কাঁপতে থাকে। তখন আমরা সেতু থেকে নেমে নিচে দাঁড়িয়ে থাকি। মাঝে মধ্যে নিচে নামার অবস্থাও থাকে না। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
নাসির চৌকিদার নামের একজন গাড়িচালক বলেন, ‘সেতুর কন্ডিশন অনেক খারাপ। ভাইঙ্গা-চুইরা একাকার অবস্থা। গাড়ি উঠলেই সেতু নড়ে। অনেক সময় জ্যাম লাগে। তখন ঘণ্টা বইয়া থাকতে হয় (অপেক্ষা করতে হয়)। দিনের বেলা গ্রামপুলিশ থাকে। তবে রাইত ৮টার পরে তাগো ডিউটি থাকে না। তখন সেতুতে অনেক বিশৃঙ্খলা ঘটে।’
সেতু দিয়ে যাতায়াতকারী মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যে সেতু দিয়া যাতায়াত করি তা আগে থেকেই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। পাশে একটা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি পদ্মা সেতুর আগেই নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেতুটির কাজ শেষ হয়নি। এজন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, মূল সেতুর স্ট্রাকচারের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়কের কাজের কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল। সেগুলো সমাধান হয়ে বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে। আমরা ঠিকাদারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলেছি। আশা করছি ঈদের আগে নতুন সেতু দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
বিধান মজুমদার অনি/এসআর/এএসএম