রাজধানীর মালিবাগ থেকে ফকিরের পুল যাওয়ার পথে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায় ভাড়ায় চালানো মোটরসাইকেলচালক কামরুল হাসানের (৩২) সামনে। গাড়িতে স্টিকারে লেখা ছিল ‘প্রেস’। কামরুল হাসানকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। গাড়িতে ওঠেন ছয়জন।
এরপর কামরুল হাসানের ফোন বন্ধ করে চাওয়া হয় চার লাখ টাকা মুক্তিপণ। না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরে চলন্ত গাড়িতে মারধরের মধ্যেই তাকে উদ্ধার করে র্যাব। এ ঘটনায় অপহরণ চক্রের সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (১ জুন) বিকেলে ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ সদর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এরআগে শনিবার (৩১ মে) রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-ঢাকাগামী মহাসড়কে ময়মনসিংহ সদরের চুরখাই এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া কামরুল হাসান বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ধামাহার শোলাগাড়ী গ্রামের মৃত আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে। তিনি রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় পাঁচ বছর ধরে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ার করে সংসার চালান।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাহমুদনগর গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিন সরদারের ছেলে মো. রিফাত হাসান মিন্টু (২৯), পাঠানতুলা গ্রামের মো. নবিজুল ইসলামের ছেলে মো. আশরাফুল ইসলাম (২৯), মাহমুদনগর গ্রামের মো. হাতেম আলীর ছেলে মামুন অর রশিদ (২৪), পশ্চিম দাপুনিয়া গ্রামের মো. চুন্নু মিয়ার ছেলে মো. আল-আমিন (৩৫) ও তাতখোড়া গ্রামের মৃত নবী হোসেনের ছেলে মো. মোতালিব (৩৬), ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার শিকদারকান্দা গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ খাঁর ছেলে মো. মিরাজ খাঁ (৫২) ও ঢাকার হাতিরঝিল থানার মালিবাগ রেলগেট এলাকার মো. সেলিম কাজীর ছেলে মো. আমিন কাজী (২২)।
র্যাব জানায়, গাড়িতে মারধরের একপর্যায়ে টাকা দিতে রাজি হলে ফোনটি চালু করে কামরুলকে দেওয়া হয়। তারপর নিজের গ্রামের পরিচিত এক ভাইকে ফোন করে নিজে বিপদে পড়ার কথা জানিয়ে চার লাখ টাকা ব্যবস্থা করার কথা বলেন। বিষয়টি কামরুলের পরিবারের সদস্যরা র্যাবকে জানায়। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহ সদরের চুরখাই এলাকায় অভিযান চালিয়ে কামরুলকে উদ্ধার করে র্যাব। এসময় অপহরণ চক্রের ওই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ সদর দপ্তরের অধিনায়ক নয়মুল হাসান বলেন, জব্দ করা গাড়ি থেকে সংসদ সদস্যদের গাড়িতে ব্যবহার করার মনোগ্রাম, গাজীপুর পুলিশ, ডিবি, প্রেস, চ্যানেল-১৬, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আরএএম গার্মেন্ট ও বিজিএমইএ লেখা লেমিনেটিং করা কাগজ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করে টার্গেট করা ব্যক্তিকে অপহরণ করতেন। পরে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। বর্তমানে সংসদ না থাকায় প্রেস, পুলিশ ও এনবিআর লেখা স্টিকার ব্যবহার করে অপহরণ করছিল চক্রটি। গ্রেফতারদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।’
কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর/জিকেএস