গুম করার অপরাধের মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রেখে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। এ নিয়ে আরও আলোচনা করে খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে খসড়া অধ্যাদেশের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত খসড়া অধ্যাদেশে গুমকে সংজ্ঞায়নসহ চলমান অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। গোপন আটক কেন্দ্র স্থাপন বা ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
খসড়া অধ্যাদেশটিতে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা, ভুক্তভোগী তথ্য প্রচারকারী ও সাক্ষীর অধিকার সুরক্ষা, ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ ও আইনগত সহায়তার নিশ্চয়তা সম্বলিত বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে। অধ্যাদেশটিকে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষার নিমিত্তে তহবিল গঠন ও তথ্য ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার বিধানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে গুম ছিল বহুল আলোচিত বিষয়। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ভিন্নমত ও পেশার অসংখ্য মানুষকে গুম করার কারণে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও সমালোচিত ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক গুমের ঘটনা প্রকাশিত হতে থাকে। এ কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গৃহীত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অফ অল পারসন্স ফ্রম ডিজঅ্যাপিরিয়েনসে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট অংশীদার হয়। উক্ত কনভেনশনের আলোকে ও সংবিধানের সংরক্ষিত জীবন ও ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকার কার্যকর করার উদ্দেশ্যে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণয়ন করা সমীচীন।
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন এবং গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষার অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণয়নের লক্ষ্যে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়।
গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া বিষয়ে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ব্লাস্ট, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন) ও অন্যান্য মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে প্রাপ্ত মতামত বিবেচনায় নিয়ে এবং আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত দুটি মতবিনিময় সভা থেকে প্রাপ্ত মতামত ও পরামর্শ পর্যালোচনা পূর্বক খসড়া পরিমার্জন করা হয়।
এমইউ/ইএ