গুলিতে সাংবাদিক মেহেদীসহ ৭ জনের মৃত্যু: ৩০ হাজার জনের নামে মামলা

1 month ago 22

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গুলিতে সাংবাদিক মেহেদী হাসানসহ সাতজনের মৃত্যুর ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শনিবার (২৭ জুলাই) যাত্রাবাড়ী থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. হোসেন জায়েদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

রোবাবার (২৮ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন।

মামলার অভিযোগে বাদী বলেন, গত ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার ঢাকা-চট্টগ্রাম ইনকামিং ও আউটগোয়িং মহাসড়কের কাজলা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত পাকা রাস্তার ওপর অজ্ঞাতনামা প্রায় ২০,০০০/৩০,০০০ জন বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দুষ্কৃতকারী কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের আড়ালে সমবেত হয়ে সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে। এসময় তারা ফুটওভার ব্রিজ এবং ট্রাফিক পুলিশ অফিস বক্স, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, হানিফ ফ্লাইভারের টোলপ্লাজা, মহাসড়ক ডিভাইডার, বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে। থানা ভবন দখল ও থানার অস্ত্র, গুলি নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছিল তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আড়ালে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী ও অন্যান্য দুষ্কৃতকারীরা কাজলা এলাকায় অবস্থিত রাস্তার বেরিকেড, ট্রাফিক পুলিশ অফিস বক্স, মহাসড়কের ডিভাইডার, টোলপ্লাজা, শনির আখড়া ব্রিজ ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করছিল। তাদের মধ্যে কতিপয় দুষ্কৃতকারী হেলমেট, মাস্ক ও বিভিন্ন মুখোশ পরিহিত ও আক্রমাত্মক ছিল।

এজাহারে আরও বলা হয়, অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করতে নিষেধ ও সরে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করার পরেও শান্ত না হয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপর এবং নিচ দিয়ে থানায় একাধিকবার আক্রমণ করে দখলের চেষ্টা করে। পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে ইট, পাথর, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ শুরু করে এবং লোহার রড, লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত করে ও তারা ছত্রভঙ্গ না হওয়ার আচরণ প্রকাশ করে। পুলিশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড, শটগানের ব্যবহার করলে তারা ছত্রভঙ্গ না হয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে হত্যা এবং তাদের অস্ত্র, গুলি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাকেল, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করতে থাকে এবং পুলিশের দিকে অগ্রসর হয়ে পুলিশকে আক্রমণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গত ১৮ জুলাই সকাল ৮টা থেকে পরের দিন রাত ২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, দুষ্কৃতকারীরা যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা, ট্রাফিক পুলিশ বক্স, বিদ্যুৎ অফিস, পেট্রোবাংলা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস অফিস, সরকারি ডাকঘর, বিটিসিএল অফিস, বিআরটিসি বাস ডিপো, রাস্তার দুই পাশে পার্কিংয়ে থাকা বিভিন্ন পরিবহনের একাধিক বাস/ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে অনুমান তিন কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করে।

পরবর্তী সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানতে পারি, জনৈক ওয়াসিম শেখ (৩৮), অজ্ঞাতনামা পুরুষ (২৮), মো. শাকিল (২০), নাজমুল কাজী (৩৪), আব্দুল্লাহ (২০), সাংবাদিক মেহেদী হাসান (৩১) ও অজ্ঞাত পুরুয়ের (৩০) লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৮ জুলাই বিকেল অনুমান ৪টা থেকে রাত অনুমান ১১টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কাজলা এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীরা ওয়াসিম শেখ (৩৮) ও নাজমুল কাজীকে (৩৪) পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের মর্গে লাশ পেয়ে বিধি অনুযায়ী সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য/সিসিটিভি ফুটেজ/ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কর্মীদের থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আড়ালে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশে, আর্থিক সহায়তায় ও প্ররোচনায় তাদের অঙ্গসংগঠনের ২০,০০০/৩০,০০০ জন সন্ত্রাসী নেতাকর্মী পূর্বপরিকল্পিতভাবে একই উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি ও মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্র সহকারে পুলিশকে আক্রমণ করে। অস্ত্র ও গুলি ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের মনোবল ভেঙে দিয়ে দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে দুষ্কৃতকারীরা এ নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে।

জেএ/এসএনআর/জেআইএম

Read Entire Article