গুড় খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী?

3 hours ago 5

শীতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গুড়ের মিষ্টি সুবাস। কারণ এ সময় পিঠা-পুলি তৈরির ধুম পড়ে যায় ঘরে ঘরে। আর পিঠা বা পায়েসের স্বাদ গুড় ছাড়া ঠিক জমে না। পুষ্টিবিদদের মতে, রস থেকে তৈরি প্রাকৃতিক গুড়ে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। খেজুরের গুড়ে এমন অনেক ওষুধি গুণ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

গুড়ে থাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, কোলিন, বিটেইন, ভিটামিন বি-১২, বি-৬, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। এতে কোনো ধরনের চর্বি নেই। গুড় শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও রক্ত পরিশোধন করে যা রক্ত স্বল্পতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, ডিটক্সিফাই করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। মাসিকের ক্র্যাম্পের জন্যও গুড় একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। মোটকথা পরিমিত পরিমাণে গুড় খাওয়া সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য খুবই উপকারী।

শীতে গুড় খাওয়ার যত উপকারিতা

সর্দি-কাশি সারায়

সর্দি ও কাশির মতো ফ্লু’র মতো উপসর্গ নিরাময়েও গুড় সাহায্য করে। এটি শরীরে তাপ উৎপাদনের দিকে পরিচালিত করে, ফলে ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করে। গুড় গলা ব্যথা বা খুসখুসেভাব সারাতে দারুন কাজ করে। আরো ভালো উপকার পেতে, গরম দুধে গুড় মিশিয়ে পান করুন কিংবা চায়ে মিষ্টি হিসেবে ব্যবহার করুন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, সেলেনিয়াম ও জিঙ্কের মতো খনিজ থাকায় গুড় খেলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এটি বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করতে সহায়তা করে। তাই শীতকালে নিয়মিত খেতে পারেন গুড়।

শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সমাধান করে

যাদের ঘন ঘন শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হয়, তাদের জন্য গুড় হতে পারে সবচেয়ে উপকারী সমাধান। গবেষণা অনুসারে, গুড় শরীর থেকে ধূলিকণা ও অবাঞ্ছিত কণাগুলোকে শ্বাসযন্ত্র, ফুসফুস, খাদ্যনালি, পাকস্থলী ও অন্ত্রে উপশম প্রদান করে। সেরা ফলাফলের জন্য মরিচ, তুলসি, শুকনো আদা বা তিলের সঙ্গে গুড় খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ওজন কমে

শীতে অনেকেরই ওজন বেড়ে যায়। তবে গুড় খেয়ে এ সময় সহজেই ওজন বশে রাখতে পারেন। গুড় একটি জটিল চিনি, যা সুক্রোজের দীর্ঘ চেইন দ্বারা গঠিত। শরীর সুক্রোজ হজম করতে সময় নেয়। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনি পূর্ণ বোধ করবেন। মোটকথা গুড় ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়া গুড় হলো পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। যা ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে ও পেশি তৈরিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে পটাসিয়াম শরীরে পানি ধারণ কমাতেও সাহায্য করে। তাই ওজন কমাতে গুড় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুন

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

গুড়ের পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের উপস্থিতি শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা বজায় রাখে। গুড় রক্তনালিকে প্রসারিত করে মসৃণ প্রবাহ ও রক্তচাপ স্থিতিশীল করে। তাই কেউ যদি উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপে ভুগেন, তাদের খাদ্যতালিকায় নির্দ্বিধায় রাখতে পারেন গুড়।

অ্যানার্জি বাড়ায়

গুড় খেলে মুহূর্তেই অ্যানার্জি মেলে। এমনকি গুড় ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে যা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। এর কারণ এটি অপরিশোধিত। ক্লান্তি প্রতিরোধে দ্রুত সাহায্য করে গুড়।

মাসিকের ব্যথা কমায়

মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য গুড় একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার। গুড় খাওয়ার ফলে এন্ডোরফিন (সুখী হরমোন) নিঃসৃত হয়। মাসিকের বিভিন্ন উপসর্গ যেমন- মেজাজের পরিবর্তন, খাবারের লোভসহ আরও অনেক কিছু মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। গুড় নিয়মিত সেবনে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে আসে।

রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ করে

রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধের জন্য, শরীরে আয়রন ও ফোলেটের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে আরবিসি’র মাত্রা বজায় রাখা প্রয়োজন। গুড়ে আয়রন ও ফোলেট দুটোই মেলে। তাই নিয়মিত গুর খেলে রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ হয় দ্রুত।

শরীর পরিষ্কার করে

খাবার খাওয়ার পর গুড় খেলে অন্ত্র, পাকস্থলী, খাদ্যনালি, ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র থেকে সব ধরনের অবাঞ্ছিত কণা সফলভাবে অপসারণ হৈয়। গুড় রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় যা পরবর্তীতে শরীরে সোডিয়াম ও পটাসিয়ামের পরিমাণ বাড়ায়। সুষম সোডিয়াম-পটাসিয়াম অনুপাত অ্যাসিডিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এইভাবে রক্তকে বিশুদ্ধ রাখে।

লিভার পরিষ্কার রাখে

গুড়ে প্রাকৃতিক ক্লিনজিং বৈশিষ্ট্য আছে, বিশেষ করে লিভারের জন্য। প্রাকৃতিক এই মিষ্টি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি লিভারকে ভালোভাবে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। তাই যারা লিভার সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন তাদের গুড় খাওয়া শুরু করা উচিত এখন থেকেই।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে

অন্ত্রের গতিবিধিকে উদ্দীপিত করতে ও শরীরে হজমকারী এনজাইমগুলোর সক্রিয়করণে সহায়তা করে গুড়। ভারি খাবার খাওয়ার পর গুড় খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমে যায়। খাওয়ার ঠিক পরেই সামান্য ঘি দিয়ে গুড় খেলে মলত্যাগের ক্ষেত্রে বিস্ময়কর কাজ করবে। গুড় ও ঘি চর্বির আয়রন উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে প্রাকৃতিক রেচক হিসেবে কাজ করে।

জয়েন্টের ব্যথা কমায়

আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের ব্যথায় ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য দারুন উপকারী গুড়। এটি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভালো উৎস। এই দুটি পুষ্টি উপাদান একত্রিত হলে জয়েন্ট বা হাড়ের যে কোনো সমস্যা দূর করতে একসঙ্গে কাজ করে। এর সঙ্গে আদা মেশালে পুষ্টিগুণ আরও বাড়ে।

ত্বক ভালো রাখে

গুড় রক্তকে শুদ্ধ করে ও হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা বাড়ায়। ফলে ব্রণ বা ব্রণের সমস্যার সমাধান হয় ও ত্বককে আরও স্বাস্থ্যকর করে তোলে। গুড়ে থাকা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে ও ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ত্বকের জন্য গুড়ের উপকারিতা আরও মজবুত হয় যখন এর সঙ্গে তিলের বীজ খাওয়া হয়।

মূত্রনালির সমস্যা সারায়

আখ একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক, তাই গুড়ও এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মূত্রাশয়ের প্রদাহ কমানো, প্রস্রাবকে উদ্দীপিত করা ও প্রস্রাবের মসৃণ প্রবাহ উন্নত করতে নিয়মিত খেতে পারেন গুড়।

অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

গুড় ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। প্রতি ১০-১৬ গ্রাম খনিজ থাকে। যদি কেউ ১০ গ্রাম গুড়ও গ্রহণ করেন, তবে খনিজের দৈনিক চাহিদার ৪ শতাংশ পূরণ হবে। প্রতিদিন গুড় খেলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

কীভাবে ও কতটুকু গুড় খাবেন?

খাওয়ার পরে প্রতিদিন প্রায় ১০ গ্রাম গুড় খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতি ১০ গ্রাম গুড়ে ১৬ মিলিগ্রাম খনিজ থাকে। এছাড়া দুধে বা ঘিয়ে মিশিয়ে কিংবা চায়ের সঙ্গে চিনির বদলে মিশিয়েও পান করতে পারেন। তবে গুড় অতিরিক্ত সেবন করবেন না।

এতে পেটে ব্যথা, সর্দি, কাশি, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথাসহ ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে ফুড অ্যালার্জির কারণে। গুড় খাওয়ার আগে নিশ্চিত করুন সেটি খাঁটি কি না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কিংবা কেমিক্যালযুক্ত গুড় কিন্তু অন্ত্রের সংক্রমণের কারণ হতে পারে। তাই সতর্ক থেকে গুড় খান।

সূত্র: হেলদিফাইমি

জেএমএস/এমএস

Read Entire Article