রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে কেমিক্যাল গুদামের আগুন ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও নির্বাপণ হয়নি। বুধবার (১৫ অক্টোবর) গুদামের ভেতর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কুণ্ডলীর মতো সাদা ধোঁয়া বের হচ্ছে। কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার ফাইটারদের। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থলে পরীক্ষা-নিরক্ষা করার পর ফায়ার সার্ভিস পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ফায়ার সার্ভিসের বিশেষজ্ঞ দল সকালে কেমিক্যাল স্যুট পরে গুদামের প্রধান ফটক খুলতে সক্ষম হয়েছে, তবে ভেতরে প্রবেশ করা যায়নি। ভেতরে প্রচুর সাদা ধোঁয়া রয়েছে, যা অত্যন্ত বিষাক্ত। ফলে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় লাগবে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান জানান, আমাদের কার্যক্রম চলমান, তবে দীর্ঘ সময় লাগবে কেমিক্যাল পুরোপুরি অপসারণ করতে। আমাদের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা পরবর্তীতে কী করবো।
তিনি বলেন, গোডাউনে থাকা বিভিন্ন কেমিক্যালের ধোঁয়া থেকে টক্সিক গ্যাস তৈরি হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে গেছে। এছাড়া ক্লোরিন গ্যাস ছড়িয়েছে; যা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস, ফুসফুস, হার্ট ও ত্বকের সমস্যা হতে পারে। যা ঘনবসতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহজাহান সিরাজ বলেন, কেমিক্যালের টক্সিক গ্যাস মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এখানে অনবরত অক্সিজেন নিচ্ছি, এই অক্সিজেনের সঙ্গে টক্সিক গ্যাস মিশে মানবদেহে প্রবেশ করে। ফুসফুসের এমন ক্ষতি করবে যা কেউ জানবেও না। এজন্য সবার কছে অনুরোধ কেউ যেন ভিড় না করে। সবাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি এবং মাস্ক ব্যবহার করি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশে ৩০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় বসবাসকারীদের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, কারণ আগুনের ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এখনও বাতাসে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে।
এছাড়া কাছাকাছি অবস্থিত কয়েকটি পোশাক কারখানাকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কর্মীরা ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত না হন। জ্বলন্ত রাসায়নিকের তীব্র দুর্গন্ধে শ্রমিকদের অনেককেই কর্মস্থল ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
ঘটনাস্থলে কাজ করা সাংবাদিক ও উদ্ধারকর্মীরাও বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক পরে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) শিয়ালবাড়িতে পোশাককারখানা ও কসমিক ফার্মা নামের এক কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুন লাগার খবর আসে।
খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রথমে পাঁচ ইউনিট পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে আরও সাত ইউনিট যোগ দেয় আগুন নিয়ন্ত্রণে।
পরে ১৬ জনের মরদেহ পোশাককারখানা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের নিচতলায় আগুনের তীব্রতা থাকায় এবং ছাদে ওঠার দরজা দুটি তালা দিয়ে বন্ধ থাকায় অনেকেই ভবন থেকে বের হতে পারেননি। ফলে ওই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আটকে আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন তারা।
টিটি/এমআইএইচএস/এমএস