গ্যাস উত্তোলনে দুই প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন ১৭০৯ কোটি টাকা

2 hours ago 8

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ায় দেশের অধিকাংশ কারখানাই গ্যাসের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ফলে দিনদিন দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমলেও চাহিদা বেড়েই চলেছে। ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ। আবাসিক ছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, শিল্পসহ সব খাতেই বেড়েছে চাহিদা।

তবে ঘাটতি মেটানোর নামে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানির দিকে ঝুঁকতে দেখা যায় বিগত সরকারকে। এবার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে জোর দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য এক হাজার ৭০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

আমদানি কমাতে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে জোর দিচ্ছে সরকার। এরই ফলশ্রুতিতে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গ্যাস উত্তোলনে দুটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্য সদস্যরা।

১২৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিতাস ও কামতা ফিল্ডে চারটি মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। যা বাস্তবায়ন করবে গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)।

প্রকল্পটিতে সরকার দিচ্ছে ৮৭২ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) নিজস্ব অর্থায়ন ৩৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে।

হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও মেঘনা ফিল্ডে ৩-ডি সাইসমিক জরিপ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জানুয়ারি ২০২৫ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিজিএফসিএল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩১২ কোটি টাকা দেবে সরকার। আর সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের নিজস্ব অর্থায়ন ১৪১ কোটি টাকা।

তিতাস ও কামতা ফিল্ডে চারটি মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্পের আওতায় গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিতাস ফিল্ডে ৩টি ও কামতা ফিল্ডে ১টি মল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খননের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।

কার্যক্রম: তিতাস ২৮, ২৯ ও ৩০ এবং কামতা ২ নম্বর কূপ খনন, তৃতীয় পক্ষীয় প্রকৌশল কাজ, রিগ ফাউন্ডেশন নির্মাণ এবং সমন্বিত খনন। কাজ সম্পন্ন করার জন্য বৈদেশিক পরামর্শক নিয়োগ ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ প্রসেস প্ল্যান্ট সংগ্রহ, স্থাপন, টেস্টিং ও কমিশনিং। প্রকল্প এলাকায় সম্পাদিত ৩-ডি সাইসমিক জরিপের ডাটা ও প্রতিবেদনসমূহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও বিজিএফসিএলের কারিগরি কমিটি কর্তৃক পর্যালোচনাপূর্বক গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘তিতাস ও কামতা ফিল্ডে ৪টি মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খনন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে।

তিতাস ফিল্ডে ৩টি নতুন কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট ও কামতা ফিল্ডে ১টি নতুন কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ১০ মিলিয়ন ঘনফুটসহ মোট দৈনিক প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও মেঘনা ফিঞ্চে ৩-ডি সাইসমিক জরিপ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাসের মজুত বাড়াতে হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ, নরসিংদী ও মেঘনা ফিল্ড এবং তৎসংলগ্ন অবমুক্ত এলাকায় ৩-ডি সাইসমিক জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে নতুন গ্যাস রিসোর্স/রিজার্ভ আবিষ্কার হবে।

তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডের ৩-ডি সাইসমিক ডাটা ও জরিপ প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনা করার জন্য নিযুক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৩-ডি সাইসমিক ডাটা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিজিএফসিএলের আওতাধীন ফিল্ডগুলোর গ্যাস মজুত, কূপগুলোর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন হার, গ্যাস উৎপাদনের প্রক্ষেপণ ইত্যাদি যাচাই-বাছাই/বিশ্লেষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগিতাসহ একটি বিশদ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য গঠিত কারিগরি কমিটি হবিগঞ্জ ও মেঘনা ফিল্ডে ৩-ডি সাইসমিক জরিপ পরিচালনার বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ ফিল্ড ও তৎসংলগ্ন অবমুক্ত এলাকাসহ ৮৭৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা এবং বাখরাবাদ, নরসিংদী ও মেঘনা ফিল্ডে ৫৭৫ বর্গ কিলোমিটারসহ মোট ১৪৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৩-ডি সাইসমিক জরিপ পরিচালনার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এমওএস/এমকেআর

Read Entire Article