চতুর্দিকে হাজারো দর্শকের উল্লাস আর করতালি। কোথাও নেই দাঁড়ানোর এতটুকু জায়গা। কেউ স্কুলের ছাদে, কেউ গাছের ডালে, আবার কেউবা উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখায় মত্ত। নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ সবার দৃষ্টি খেলার দিকে। তবে এটা ক্রিকেট কিংবা ফুটবল নয়, ছিল গ্রামবাংলার জনপ্রিয় হাডুডু খেলা।
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এ খেলার আয়োজন করা হয় বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ১২ নম্বর দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। খেলাটি দেখতে ভিড় জমান স্থানীয় খেলাপ্রেমীরা। আয়োজকদের এমন উদ্যোগে খুশি দর্শকরা। আগামীতেও ধারাবাহিকভাবে খেলাটি আয়োজনের কথা জানান তারা।
শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আদম আলী হাওলাদার ও সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন হাওলাদারের উদ্যোগে ১২ নম্বর দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের বউডুবারচর এলাকায় স্কুল মাঠে এ খেলার আয়োজন করা হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এ খেলায় অংশ নেন এলাকার ষাটোর্ধ্ব দুটি দলের মোট ১৬ সদস্য। আর্জেন্টিনা একাদশ বনাম ব্রাজিল একাদশ নামে দুটি দল মুখোমুখি হয়। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ২-১ ব্যবধানে আর্জেন্টিনা একাদশকে হারিয়ে বিজয়ী হয় ব্রাজিল একাদশ। এমন উৎসবমুখর পরিবেশে খেলা দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে শত শত দর্শক।
৬০ বছর বয়সী সাইয়েদ আলী হাওলাদার বলেন, খেলা দেখে খুবই ভালো লাগল। আমার চেয়ে বেশি বয়সের লোকেরা হাডুডু খেলছে। যে বয়সের লোকেরা লাঠি ভর দিয়ে হাঁটে ঠিক সেই বয়সের বৃদ্ধরা খেলোয়াড়। আশা করি এ খেলা ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হবে।
আর্জেন্টিনা একাদশের খেলোয়াড় এরশাদ হাওলাদার (৭০) বলেন, খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মনে হলো যৌবনে ফিরে গেছি। খেলার সময় একবারও মনে হয়নি আমি বৃদ্ধ। জওয়ানরাও আমাদের কাছে হেরে যাবে।
ব্রাজিল একাদশের খেলোয়াড় আ. রব বেপারি বলেন, ছোট থাকতে খেলেছিলাম। আবার ৪০ বছর পর খেলতে নেমেছি। খুবই ভালো লাগল। এ বয়সেও হাডুডু খেলতে পেরেছি। আমাদের কাছে বর্তমানের যুবকরাও হেরে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বিয়ের আগে অনেক খেলতাম। আমরা হায়ারে অনেক এলাকায় খেলতে যেতাম। তবে বিয়ে করার পর আর তেমন খেলা হয়নি। আজ আমাদের এলাকায় ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধদের খেলায় অংশগ্রহণ করলাম।
স্থানীয় ইউসুফ আলী হাওলাদার বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী দুই দলীয় হাডুডু প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলা দেখতে স্থানীয়দের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। উনাদের খেলা দেখে মনে হয়নি উনারা বৃদ্ধ।
খেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আদম আলী হাওলাদার বলেন, হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেলাটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং মানুষের মনকে সতেজ রাখতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। এ খেলার আয়োজন করায় স্থানীয় খেলাপ্রেমী ও খেলোয়াড়দের ভীষণ সাড়া পেয়েছি। তাই ভবিষ্যতে খেলাটি ধরে রাখতে ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হবে।
সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন হাওলাদার বলেন, হাডুডু আমাদের জাতীয় খেলা। তবে এখন আর আগের মতো এই খেলার আয়োজন করা হয় না। স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে খেলার আয়োজন করেছে। সবাই অনেক ভালো খেলেছে। আমরা চাই ভালো খেলে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে।