জামায়াত কর্মী হত্যা মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার শ্যামল চন্দ্রের (৩৮) আওয়ামী লীগে কোনো পদ নেই। তবে তিনি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ও তার স্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতির ভোটের মাঠের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। পাশাপাশি বামনডাঙ্গা স্টেশনে লোকাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি করতেন তিনি।
শ্যামল চন্দ্র বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ গ্রামের নেপাল চন্দ্র ঘোষের ছেলে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ভুলভাল ইংরেজি বলার কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক পরিচত তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ভাইরাল শ্যামল দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বামনডাঙ্গা স্টেশনে লোকাল ট্রেনের টিকিট বিক্রেতা হিসেবে চাকরি করতেন। অস্থায়ী এ চাকরিতে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতন পেতেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আর পর থেকে সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের কাছের মানুষ ছিলেন। স্টেশন এলাকায় রাতে পার্টির লোকজনদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন লিটন। শ্যামল সেই আড্ডায় থেকে লিটনের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিতেন বলে জানা গেছে।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি-জামায়াত। তবে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়। শ্যামল আওয়ামী লীগের হয়ে সক্রিয়ভাবে ভোটের মাঠে কাজ করেন।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ওই বছরের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে বামনডাঙ্গার মনমথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকার হয়ে কাজ করছিলেন শ্যামল। এসময় কেন্দ্রের পাশ দিয়ে শাহাবুল ইসলাম নামের জামায়াতের এক কর্মী যাচ্ছিলেন। জামায়াত নেতাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে শাহাবুলের পরিবারের লোকজন থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী সমর্থকের পাশাপাশি স্টেশনে জোকার হিসেবে পরিচিত শ্যামল। ভুলভাল ইংরেজি বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল বনে যান। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ‘সি ইউ নট ফর মাইন্ড’ ও ‘হ্যাভ আ রিল্যাক্স’ বাক্য ব্যবহার করে।
আওয়ামী লীগ যখন সারাদেশে বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তখন সেই সুযোগ নেন শ্যামলও। বামনডাঙ্গায় স্টেশনে টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবু মিয়া বলেন, ‘তিনি (শ্যামল) আওয়ামী লীদের কোনো পদই ছিলেন না। তবে কঠোর আওয়ামী লীগভক্ত ছিলেন।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিষ্ণু কুমার বলেন, ‘শ্যামলকে কোনো আওয়ামী লীগ নেতাই ফাঁসিয়েছেন। নেতারা নিজেরা বাঁচার জন্য শ্যামলের নাম হত্যা মামলায় দিয়েছেন।’
শ্যামলের বাবা নেপাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আমি শাক-সবজির ব্যবসা করে খাই। রাজনীতি বুঝি না, পেটনীতি বুঝি। আমার ছেলে কোনোদিন রাজনীতি করে নাই।’
পুলিশ জানায়, ঘটনার সাড়ে ১০ বছর পর নিহত জামায়াত নেতার ছোট ভাই এস এম শাহজাহান কবির বাদী হয়ে গত ২২ অক্টোবর সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতিকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলায় ৭৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়।
সেই মামলায় মঙ্গলবার দুপুরে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বামনডাঙ্গা স্টেশন বাজার এলাকা থেকে শ্যামল চন্দ্রকে গ্রেফতার করে। তিনি এ মামলায় এজাহারভুক্ত ৩৪ নম্বর আসামি। বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন শ্যামল।
এ এইচ শামীম/এসআর/জিকেএস