গড়াই নদীতে কুমির আতঙ্ক, খাবার হিসেবে রাখা হয়েছে ছাগল, হাঁস
কুষ্টিয়ার গড়াই নদীতে দেখা মিলেছে কুমিরের অস্তিত্ব। একটি কিংবা দুটি নয়, একাধিক কুমিরের দেখা মেলায় আতঙ্ক বেড়েছে নদীপাড়ের মানুষের। এ কারণে নদীতে নামতে পারছেন না জেলে থেকে শুরু করে কোনো মানুষ। তবে কুমিরদের বশে আনতে খাবার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে ছাগল ও হাঁস। তা দেখতে নদীপাড়ে জড়ো হচ্ছেন হাজারো উৎসুক মানুষ।
গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত দিনভর নদীপাড়ে কুমির আতঙ্কের মাঝেও ভিন্ন রকম আবহ দেখা গেছে স্থানীয়দের মাঝে। নারী পুরুষ কিংবা শিশু সব বয়সী মানুষ কুমির দেখতে ভিড় করছেন কুষ্টিয়ার গড়াই নদী সংলগ্ন জুগিয়া ভাটাপাড়া এলাকায়। পদ্মার প্রধান শাখা গড়াইয়ের বিশাল জলরাশি শুকিয়ে যাওয়ায় খালে পরিণত হয়েছে কোনো কোনো জায়গায়। জুগিয়া ভাটাপাড়া এলাকার ঠিক গোরস্থানের নিচে একটি খালে স্থানীয়দের চোখে পড়ে তিনটি কুমিরের। দুটি ক্ষুদ্রাকৃতির আর একটি বেশ বড়, তা দেখে স্থানীয়দের মাঝে যেন আতঙ্কের শেষ নেই।
এলাকার মানুষের যেন ঘুম হারাম হয়ে গেছে। গোসল কিংবা আনুষঙ্গিক প্রয়োজন মেটানো পানির প্রধান উৎস এই নদী এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন ধরে জেলেরাও জাল নিয়ে যান না নদীতে। তাদের আনাগোনাও নেই নদীতে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে নদীপাড়ে যে আবহ তৈরি হয়েছে, তা কিন্তু চোখের পড়ার মতো।
সরেজমিন দেখা গেছে, কুমিরকে বাগে আনতে অভিনব পন্থাও অবলম্বন করেছেন কেউ কেউ। মঙ্গলবার দুপুরে কুমিরকে আকৃষ্ট করতে কুমিরের আশপাশে বেঁধে রাখা হচ্ছে ছাগল, পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে জ্যান্ত হাঁস। তা উপভোগ করছেন নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সব বয়সী মানুষ। কখন কুমিরের দেখা মিলবে কখন ছাগল আর হাঁস গিলে খাবে কুমির। নির্জন এলাকা হলেও কয়েকদিনের এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় যেন মেলা বসেছে। ঝালমুড়ি থেকে শুরু করে হরেক রকমের খাবার বিক্রেতারা জীবিকা নির্বাহে ব্যস্ত সেখানে।
ঝালমুড়ি বিক্রেতা খাদিমুল ইসলাম জানান তিনি একজন জেলে। নদীতে মাছ ধরে জীবিকানির্বাহ করেন। কিন্তু নদীতে কুমিরের দেখা মেলায় ভয়ে জাল ফেলছেন না নদীতে। তাই জীবিকার তাগিদে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন তিনি।
নদীপাড়ের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মিনু খাতুন জানান, খাবার পানি ছাড়া গোসলসহ প্রয়োজনীয় সব কাজই সারেন নদীর পানি দিয়ে; কিন্তু নদীতে কুমির দেখতে পাওয়ায় ভয়ে নামতে পারছেন না নদীতে।
স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদ আলী জানান, আগে কখনো এই নদীতে কুমির দেখিনি। এখন দেখা যাচ্ছে। চরম আতঙ্কে আছি।
বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করেন শাহাবুদ্দিন মিলন। গড়াই নদীতে কুমিরের দেখা মেলায় তিনিও এসেছেন সেখানে। তবে হাতে করে নিয়ে এসেছেন একটি তরতাজা ছাগল। কুমিরের খাবার হিসেবে আনেন ছাগল। যেখানে কুমিরের দেখা মিলেছে তার ঠিক পাশেই খুঁটি গেড়ে বেঁধে রেখেছেন ছাগলটি। উৎসুক মানুষের আনাগোনা দেখে ছোটাছুটি করছে ছাগলটি।
শাহাবুদ্দিন জানান, কুমিরের দেখা মেলায় এলাকার মানুষ বেশ আতঙ্কে আছে। যেখানে কুমির রয়েছে সেখানে পানির কোনো প্রবাহ নেই। খাবারের কষ্ট করছে কুমির। তাই কুমিরের খাবার হিসেবে একটি ছাগল কিনে এনেছি। অনেকেই আবার হাঁস এনে ছেড়েছেন পানিতে। তবে বনবিভাগের উচিত এমন পরিস্থিতি থেকে স্থানীয়দের পাশে দাঁড়ানো।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, শুনেছি গড়াই নদীতে কুমিরের দেখা পেয়েছেন স্থানীয়রা। এতে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু করণীয় নেই বলেও জানান তিনি।