ক্যানসারের নাম শুনলেই অনেকে আঁতকে ওঠেন। আমাদের সমাজে এখনও ধারণা আছে, ক্যানসার মানেই মৃত্যু। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আধুনিক চিকিৎসা ও সচেতনতার কারণে ক্যানসার এখন আর মৃত্যুদণ্ড নয়। বরং সময়মতো রোগ ধরা পড়লে অনেক ক্ষেত্রেই সফলভাবে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্তরের দশক থেকে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের বেঁচে থাকার হার তিনগুণ বেড়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হওয়া এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা।
তবে সমস্যা হলো, ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। শরীরে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন হলে সেটাকে সাধারণ অসুখ ভেবে অবহেলা করা হয়।
যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি মানুষ জীবনের কোনো এক সময় ক্যানসারের উপসর্গ অনুভব করলেও মাত্র ২ শতাংশ ভেবেছেন যে এটি ক্যানসারের কারণে হতে পারে। বাকিরা পাত্তাই দেননি, এমনকি চিকিৎসকের শরণাপন্নও হননি।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষক ক্যাটরিনা হুইটেকার বলেন, আগে দেখা যায়নি এমন কোনো নতুন উপসর্গ শরীরে দেখা দিলে সেটাকে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোন কোন লক্ষণ সতর্ক হওয়ার ইঙ্গিত দেয়
ঘন ঘন জ্বর : ক্যানসার শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে প্রায়ই জ্বর দেখা দেয়। ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় জ্বরে ভোগেন।
অস্বাভাবিক ক্লান্তি : বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি সারাক্ষণ ক্লান্তি লাগে, তবে এটি ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে। লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রেও শুরুতেই এমন ক্লান্তি দেখা দেয়।
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া : কোনো কারণ ছাড়াই যদি পাঁচ কেজি বা তার বেশি ওজন হ্রাস পায়, তাহলে সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালি বা ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
ত্বকে পরিবর্তন : শুধু ত্বকের ক্যানসার নয়, আরও কিছু ক্যানসারে ত্বকের রঙ পরিবর্তন, চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস), ত্বক লাল হয়ে যাওয়া বা চুলকানি দেখা দিতে পারে।
খাবার বা পানি গিলতে অসুবিধা : কয়েক দিন ধরে নিয়মিত খাবার বা পানি গিলতে কষ্ট হলে গলা, পাকস্থলী বা খাদ্যনালির ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
টানা কাশি বা কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন : তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি চলতে থাকলে সেটি ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। আবার কণ্ঠস্বরে হঠাৎ পরিবর্তন হলে তা স্বরযন্ত্র বা থাইরয়েড ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে।
অস্বাভাবিক রক্তপাত : কাশির সঙ্গে রক্ত এলে ফুসফুস, মলের সঙ্গে রক্ত এলে মলাশয়, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত এলে মূত্রাশয় বা কিডনির ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে। নারীদের ক্ষেত্রে জরায়ু বা সার্ভিক্স ক্যানসারেও অস্বাভাবিক রক্তপাত দেখা দিতে পারে।
মলমূত্রের অভ্যাসে পরিবর্তন : দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা মলের আকারে পরিবর্তন হলে মলাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। প্রস্রাবের সময় ব্যথা, রক্ত পড়া বা হঠাৎ প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া/কমে যাওয়া মূত্রাশয় বা প্রোস্টেট ক্যানসারের ইঙ্গিত দেয়।
ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া : শরীর বা মুখে কোনো ক্ষত চার সপ্তাহের মধ্যে না শুকালে সেটিও ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
সচেতন থাকুন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যানসারকে ভয় পেয়ে নয়, সচেতন থেকে মোকাবিলা করতে হবে। শরীরে হঠাৎ কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই হলো বাঁচার প্রধান উপায়।
সূত্র : বিবিসি