ঘরের মধ্যে একটুখানি সবুজের ছোঁয়া মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সুস্থ জীবনযাপন। কিছু ঘরোয়া গাছ বাতাস বিশুদ্ধ করতে, মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
ব্যস্ত নগর জীবনে যেখানে প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া দুষ্কর, সেখানে ঘরের কোণে রাখা এক টুকরো সবুজই হয়ে উঠতে পারে প্রশান্তির উৎস। স্বাস্থ্য ভালো রাখা থেকে শুরু করে মনকে শান্ত করা — সবই সম্ভব এই গাছগুলোর উপস্থিতিতে। এমন কয়েকটি গাছের কথা জেনে নিন-
১. স্নেক প্ল্যান্ট
একটু সাপের মতো বাঁকানো পাতার জন্য এই গাছটির নাম হয়েছে ‘স্নেক প্ল্যান্ট’। এটি ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখে, বিশেষ করে রাতে এর কার্যকারীতা বেশি। তাই শোবার ঘরে একটা স্নেক প্ল্যান্ট রাখলে ঘুম ভালো হবে।
ঘরের ভেতর কয়েকটা স্নেক প্ল্যান্ট রাখলে বাতাস মান ভালো ও বিশুদ্ধ থাকে। এছাড়া বাতাসে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিকও টেনে নেয় এই গাছ। ঘরের সাজসজ্জায় মানিয়ে যায়, আবার একই সঙ্গে শরীরের জন্যও ভালো।
২. পিস লিলি
‘পিস লিলি’ তার শুভ্র দৃষ্টিনন্দন সাদা ফুল ও কোমল সবুজ পাতার জন্য জনপ্রিয়। এই গাছটি কম আলো এবং স্যাঁতসেঁতে মাটিতে ভালো থাকে। ইনডোর গাছ হিসেবে পিস লিলি মানসিক স্বস্তি বাড়ায়। আপনার ঘরের ছায়াযুক্ত কোণ ও শোবার ঘরের রাখতে পারবেন এটি। তবে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এর পাতা পোষা প্রাণী ও ছোট বাচ্চাদের জন্য সামান্য বিষাক্ত হতে পারে।
৩. স্পাইডার প্ল্যান্ট
স্পাইডার প্ল্যান্ট হলো সবচেয়ে সহজে পরিচর্যা করা যায়, এমন ঘরোয়া গাছগুলোর একটি। বাঁকানো পাতা আর ছোট ছোট 'স্পাইডারেট' বা শিশু গাছের জন্য এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এই গাছ খুব সহজে বেড়ে ওঠে এবং বংশবিস্তার করে।
স্পাইডার প্ল্যান্ট কম আলো থেকে শুরু করে উজ্জ্বল পরোক্ষ আলোতেও ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। এমনটি এই গাছটি মাঝে মাঝে অবহেলাও সহ্য করতে পারে। এটি শোবার ঘর, রান্নাঘর কিংবা অফিসের মতো জায়গায় রাখার জন্য উপযুক্ত।
৪. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা একটি উপকারী গাছ। সূর্যের তাপে হওয়া পোড়া দাগ বা ত্বকের জ্বালা-পোড়ার প্রাকৃতিক সমাধান দেয় অ্যালোভেরা।
হাজার হাজার বছর ধরে এটি ত্বক ও শরীরের নানা সমস্যার জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সেই সঙ্গে এটি বাতাসের অনেক রাসায়নিক ক্ষতিকর কণা শোষণ করে। এছাড়াও অ্যালোভেরা স্মুদি, জুস বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের রেসিপিতেও সুস্বাদু উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কম যত্নে টিকে থাকার ক্ষমতার জন্য অ্যালোভেরা গাছপ্রেমীদের জন্য একেবারে আদর্শ ঘরোয়া গাছ।
৫. পথোস
পথোস বা ডেভিল’স আইভি হলো এক ধরনের লতানো গাছ, যেটা খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। এর পাতা মানুষের হৃদয়ের মতো আকৃতির হয়। গাছটি সবুজ ও হলুদ-সবুজ রঙে মিশে বেশ সুন্দর দেখায়। এটি প্রায় সব ধরনের আলোতে ভালোভাবে জন্মায় এবং অল্প পানিতেও টিকে থাকে। এছাড়া এটি খুব সহজে নতুন গাছে রূপান্তর করা যায়, যা গাছপ্রেমীদের জন্য বাড়তি আনন্দের বিষয়। পথোস গাছটিকে যেইভাবে রাখা হোক এটি ঘরকে সবুজ আর প্রাণবন্ত করে তোলে।
৬. আরেকা পাম
আরেকা পামের উজ্জ্বল ও পালকের মতো পাতাগুলো ঘরের ভেতর এনে দেয় এক ধরনের ট্রপিক্যাল সৌন্দর্য। পাশাপাশি গাছটি বাতাসও বিশুদ্ধ করে তুলে।
এই গাছ বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড, জাইলিন ও টলুইনের মতো ক্ষতিকর পদার্থ দূর করতে কার্যকর। আরেকা পাম আলোকজ্জ্বল কিন্তু পরোক্ষ আলোতে ভালোভাবে জন্মায় এবং সামান্য ভেজা মাটি পছন্দ করে।
গাছটির বেড়ে ওঠার মৌসুমে নিয়মিত পানি দিতে হয়। তবে এমনভাবে দিতে হবে যেন প্রতিবার দেওয়ার আগে মাটির উপরিভাগ সামান্য শুকিয়ে যায়। এতে পরিষ্কার বা বৃষ্টির পানি ব্যবহার করাই ভালো। গাছের জন্য প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় রাখতে পাতায় নিয়মিত পানি স্প্রে করা যায়। এছাড়া ভেজা নুড়ি-পাথর রাখা ট্রের ওপর টবটি বসানো যায়। এতে গাছের চারপাশে আর্দ্র পরিবেশ তৈরি হবে।
৭. এলিফ্যান্ট ইয়ার প্ল্যান্ট
বড়, হৃদয়-আকৃতির পাতার জন্য এলিফ্যান্ট ইয়ার গাছ বদলে দেয় ঘরের আবহ। এই গাছকে একটু বেশি যত্ন দিতে হয়। উষ্ণ আবহাওয়া ও নিয়মিত পানি দিতে হয়। কিন্তু যত্নের প্রতিদানে এটি এমন চমৎকার পাতা দেয় যা ঘরে এনে দেয় একেবারে জঙ্গলের মতো সতেজ সবুজ পরিবেশ।
তবে গাছটি খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই শিশু বা পোষা প্রাণী যেখানে আছে সেখানে এটি রাখা উচিত নয়। এলিফ্যান্ট ইয়ার গাছের শক্তিশালী উপস্থিতি একে করে তোলে ঘরের একটি দারুণ কেন্দ্রবিন্দু, যা গাছের যত্ন নেওয়ার অভ্যাসকেও আনন্দদায়ক করে তোলে।
৮. ফিলোডেনড্রন
ফিলোডেনড্রন একটি কম যত্নে বেড়ে ওঠা গাছ। এটি সহজেই ঘরের ভেতরের পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। এরা পরোক্ষ আলো এবং ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালোভাবে বড় হয়। ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি ফিলোডেনড্রন ঘরের আর্দ্রতা ও বাতাস চলাচল উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই বুকশেলফে ঝুলিয়ে রাখা বা টেবিল -- যেখানেই রাখবেন না কেন; এই গাছ ঘরে সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়।
তথ্যসূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া, আরবানস্টিমস
আনিসুল ইসলাম নাঈম/এএমপি/এএসএম