ঘাস চিবিয়ে মাঠ ‘অনুভব’ করতেন রোনালদো!

5 days ago 17
ফুটবল মাঠে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে যতভাবে দেখা গেছে—গোলের পর বুকে হাত রেখে উদযাপন, জয়ের পর ‘সিইউউ’ চিৎকার, কিংবা হতাশায় চোখ নামিয়ে হাঁটা—তবুও এমন দৃশ্য কেউ কল্পনাও করেনি। একদিন জুভেন্টাসের অনুশীলন মাঠে দেখা গিয়েছিল এক অদ্ভুত দৃশ্য: রোনালদো হঠাৎ ঘাস তুলে মুখে নিচ্ছেন, শুঁকছেন, তারপর চিবিয়ে খেয়ে ফেলছেন! অবিশ্বাস্য শোনালেও তাই হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক জুভেন্টাস ডিফেন্ডার জিয়ানলুকা ফ্রাবোত্তা এই অজানা গল্পটি জানিয়েছেন কোরিয়েরে দেলা সেরা-কে। তার ভাষায়, ‘একদিন অনুশীলনের সময় মরিজিও সারি কর্নারের সময় কিছু নির্দিষ্ট মুভমেন্ট বোঝাচ্ছিলেন। রোনালদো কিছুটা বিরক্ত ছিলেন। হঠাৎই তিনি নিচু হয়ে কিছু ঘাস তুলে নিলেন, শুঁকলেন, তারপর চিবিয়ে ফেললেন।’ ফ্রাবোত্তার দাবি, তখন রোনালদো সারিকে বলেছিলেন, ‘আমি মাঠটা অনুভব করতে ভালোবাসি—এভাবেই বুঝি বল কোথায় যাবে।’ ২০১৯–২০ মৌসুমে জুভেন্টাসের কোচ ছিলেন মরিজিও সারি। তার অধীনে দল সিরি আ জিতেছিল, কিন্তু ড্রেসিংরুমে তার সঙ্গে রোনালদোর সম্পর্ক কখনোই খুব মসৃণ ছিল না। ফ্রাবোত্তা জানান, ‘সারি রোনালদোকে অনেক সময় বলে দিতেন, কীভাবে পজিশন নিতে হবে, কোথায় দৌড়াতে হবে। অথচ রোনালদো সেই নির্দেশনা পছন্দ করতেন না। তার বিশ্বাস ছিল—তিনি নিজেই খেলার গতি ও জায়গা বুঝে নিতে পারেন।’ রোনালদো তখনও ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা—রিয়াল মাদ্রিদে ৪৫০ গোলের রেকর্ড ভেঙে এসেছেন তুরিনে। প্রথম দুই মৌসুমেই জুভেন্টাসকে এনে দেন সিরি আ ট্রফি ও কোপা ইতালিয়া। কিন্তু কোভিড-১৯–এ ক্ষতিগ্রস্ত সেই মৌসুমে দল ইউরোপে ব্যর্থ হয়, আর সারি বিদায় নেন সময়ের আগেই। রোনালদো জুভেন্টাসের হয়ে খেলেছেন ১৩৪ ম্যাচে, গোল করেছেন ১০১টি। তার অধীনে ২০২০ সালের সেই স্কুদেত্তো-ই এখন পর্যন্ত জুভেন্টাসের শেষ লিগ শিরোপা। পরে ২০২১ সালে তিনি ফিরে যান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে—যেখানে দ্বিতীয় অধ্যায়টি শেষ হয় বিতর্কিতভাবে, চুক্তি ছিন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে। এখন বয়স ৪০ ছুঁইছুঁই, তবু রোনালদো থামেননি। আল নাসরের জার্সিতে সৌদি প্রো লিগে তিনি এখনো গোলের পর গোল করছেন। সম্প্রতি ক্লাব ফুটবলে তাঁর গোলসংখ্যা পেরিয়েছে ৮০০—ইতিহাসে প্রথম কোনো ফুটবলারের এই অর্জন। চুক্তি নবায়ন করে তিনি আরও দুই বছর থাকছেন ২০২৭ পর্যন্ত, লক্ষ্য একটাই—হাজার গোলের মাইলফলক। একসময় রোনালদো নিজেই বলেছিলেন, ‘মানুষ ভাবে আমি কেবল ফুটবল খেলি, কিন্তু আমার কাছে এটা বিজ্ঞান। আমি প্রতিটি ইঞ্চি মাঠ অনুভব করি—এটাই আমাকে আলাদা করে।’ ফ্রাবোত্তার বর্ণনা অনুযায়ী, জুভেন্টাসে সেই এক মুহূর্তের ঘাস চিবোনোই যেন ছিল তার প্রতীকী প্রতিবাদ—একজন খেলোয়াড়, যিনি মাঠকে বুঝতেন নিজের অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে, আর যিনি কখনোই কারও নির্দেশে নয়, নিজের বিশ্বাসে ফুটবল খেলতে শিখেছিলেন।
Read Entire Article