ঘুমের মধ্যে ‘বোবা জিন’ ধরে? যা বলছে ইসলাম

2 hours ago 2

ঘুম মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সারাদিনের পরিশ্রম, দৌড়ঝাঁপ আর মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ ঘুমের মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পায়। ইসলামে ঘুমকে শুধু শরীরের বিশ্রাম নয়, বরং আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাত্রিকে করেছি আবরণ’। (সুরা নাবা : ৯-১০)

মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার আত্মা দেহ থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এক রহস্যময় জগতে প্রবেশ করে। সেখানেই মানুষ স্বপ্নের মাধ্যমে অনেক কিছু দেখে, অনুভব করে, আবার ভুলেও যায়।

আমাদের আশপাশে অনেককেই বলতে শোনা যায়, তারা প্রায়ই ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করতে পারেন না। কেউ কেউ বুকের ওপর অদৃশ্য কোনোকিছু চেপে ধরে আছে এমন অনুভব করেন। কেউ কেউ এটিকে বোবা জিনে ধরা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। তাই প্রশ্ন জাগে, আসলেই কি এটি বোবা জিন? ইসলামে কি এর কোনো ভিত্তি আছে? 

এ বিষয়ে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কোরআন-হাদিসের আলোকে বোবা জিন বলতে কোনোকিছু আছে বলে আমার জানা নেই। তবে অবশ্যই সবাইকে জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হবে। পবিত্র কোরআনে সুরা জিন নামেও একটি সুরা রয়েছে। কিন্তু কুরআন-হাদিসে বোবা জিনে ধরার মতো কোনো বিষয় নেই।

ইসলামি স্কলারের মতে, বিজ্ঞান স্বীকার না করলেও জিনের আছর হওয়ার বিষয়টিও ঠিক। কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে জিনের রোগীর চিকিৎসা হয়। তবে অনেকে অর্থ আত্মসাতের জন্য মানসিক রোগীকে জিনের রোগী বানানোর ব্যবসা করেন। তবে ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করতে না পারা বোবা জিনের কারণে হয় এমন— কথা কোরআন ও হাদিসের কোথাও নেই। যদি জিনের উপদ্রবের কারণে এমন হয়ে থাকে তাহলে হতে পারে, সে বিষয়ে আল্লাহই সর্বজ্ঞ। এ ছাড়া বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা থাকলে সেটা দেখা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।


কোরআন ও হাদিসে জিনদের কথা

জিনদের অস্তিত্বের বিষয়টি কোরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। মুহাম্মাদকে (সা.) মানব ও জিনজাতির রাসুল হিসেবে পাঠানো হয়েছে। ইসলামের যাবতীয় বিধান মানুষের পাশাপাশি তাদের জন্যও দেওয়া হয়েছে। রাসুলকে (সা.) উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, আমার কাছে ওহি এসেছে, নিশ্চয়ই জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে কোরআন শ্রবণ করেছে। অতঃপর তারা বলেছে, আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি।’ (সুরা জিন : ১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানবজাতির কিছু লোক জিনজাতির কিছু লোকের কাছে আশ্রয় চাইত। ফলে তারা জিনদের আত্মগরিমা আরও বাড়িয়ে দিত।’(সুরা জিন, আয়াত : ৬)

অতীত ও বর্তমানের অসংখ্য মানুষ নানাভাবে জিনের অস্তিত্ব টের পেয়েছে। অনেকে অবশ্য বুঝে উঠতে পারেনি, সেগুলো জিন ছিল। কেউ তাদের ভেবেছে আত্মা, কেউ অদৃশ্য মানব, কেউ ভিনগ্রহের প্রাণী; কেউ আবার এরকম কোনো কিছু। জিনদের অস্তিত্বের চাক্ষুষ একটি প্রমাণ হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ চোখে তাদের দেখেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাদের কোরআন তেলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। এ ছাড়া তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে খাবার চেয়েছে। মুমিন জিনেরা তাদের খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেসব পশু আল্লাহর নামে জবাই করা হবে, সেগুলোর হাড় তোমাদের খাবার। তোমাদের হাতে পড়ামাত্রই তা মাংস দিয়ে আবৃত হয়ে যাবে। আর গোবর তোমাদের পশুদের খাবার।’ (মুসলিম : ৪৫০)

এ কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) শৌচকর্মে হাড় ও গোবর ব্যবহার করতে নিষেধ করে বলেছেন, ‘তোমরা মলমূত্র ত্যাগের পর পবিত্রতা অর্জনের কাজে হাড় ও গোবর ব্যবহার করো না, এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৫০)

জিনের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে কোরআনি আমল

জিনের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কোরআনে অনেক আমল রয়েছে। খুব সহজ একটি আমল হলো নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। হাসান ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে সে পরবর্তী নামাজ পর্যন্ত আল্লাহর হিফাজতে থাকে। (তাবারানি কাবির : ২৬৬৭)

আরেকটি আমল হলো সকাল-সন্ধ্যায় তিন কুল পাঠ করা। আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, একদা আমরা এক বৃষ্টিমুখর অন্ধকার রাতে আল্লাহর রাসুলকে (সা.) খুঁজতে বের হলাম; যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। অতঃপর নবীজির সঙ্গে দেখা হলো। তিনি বলেন, তুমি কুল পাঠ করো। আমি বললাম কী পাঠ করব? তখন রাসুল (সা.)বললেন, কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়বে। এ সুরাগুলো সব কিছু থেকে তোমার হিফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (তিরমিজি : ৩৫৭৫)

Read Entire Article